মুকুল বসু বোয়ালমারী প্রতিনিধি :
বাংলার আকাশে দূর্যোগের ঘনঘটা দেখে দেবদূতের মত এগিয়ে এসেছেন কিছু মানুষ যাদের কথা জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তাঁরাই পথ দেখিয়ে, আশার আলো জাগিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মানুষের সেবায় ব্রতী হয়েছে। তাদের ভাবটা এমন,” নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই" যে মানুষটার কথা আজ না বললেই নয়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌর সদরের ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ঐতিহ্যবাহী জর্জ একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. শওকত হোসেন মিয়ার (শওকত মাস্টার) ছেলে। ছোলনা গ্রামের সুমন রাফি স্বেচ্ছায় মুমূর্ষু রোগীদের নিয়মিত রক্ত দান করে মানবতার সেবায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বোয়ালমারী উপজেলার সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন মানুষ বিনামূল্যে রক্ত পাচ্ছেন সুমন রাফির কাছ থেকে। কোনো মানুষের বিপদের কথা শুনলে সবার আগে হাজির সুমন রাফি। এখন অনেক কিছুই যেন নির্ভর করে তার উপর। দীর্ঘদিন তিনি মানবতার সেবায় এসব কাজ করছেন একেবারেই বিনাস্বার্থে। সকল ভালো কাজে অংশ নেওয়াটা তার যেন একমাত্র ব্রত। আর এভাবেই তিনি অনেকটা নীরবে নিভৃতে হাজার হাজার ভালো কাজে অংশ নিয়েছেন। সে জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন পড়লে তা সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি নিয়মিত একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করেন। তার অধীনে শতাধিক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ রয়েছে তার সেচ্ছাসেবী সংগঠনে। সেখানে নিকটাত্মীয়-স্বজন, বন্ধু এমনকি পরিচিতজনদের রক্তের গ্রুপ মোবাইল নম্বরসহ অসংখ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। কারও জরুরি প্রয়োজনে রক্ত লাগলে মোবাইলে অথবা সরাসরি যোগাযোগ করেন। তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দেন। রক্তের অভাবে যেন কোনো মুমূর্ষু রোগীর জীবন থমকে না দাঁড়ায়। কোভিড-১৯ করোনার সময় থেমে ছিলনা সুমন রাফির স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড,বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিনিয়ত ডোনার নিয়ে যাতায়াত করতো হসপিটালে। করোনা কালিন সময়ে অক্সিজেন,খাবার, ঔষধ এবং সেবা প্রদান। দীর্ঘ ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত থেমে নেই সুমন রাফির স্বেচ্ছাসেবী কাজ। মহৎ কাজে যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুমন রাফি বলেন, এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ আমি প্রত্যক্ষভাবে অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পারছি। আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে সরাসরি যুক্ত করতে পারি। একজন ব্যক্তি চার মাস পর পর বছরে তিন বার রক্ত দিতে পারেন। এভাবে আমরা যদি রক্ত দেই তবে আমরা শুধু এক একটি মানুষকে বাঁচাতে পারব তাই নয়, এক একটি পরিবারের মুখেও হাসি ফোটাতে পারি। একজন ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারার যে আত্মতৃপ্তি, তা বলে বোঝানো যাবে না।
অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা প্রথমে রক্তদানের উপকারিতাগুলো রক্তদাতাদের সামনে তুলে ধরি। একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন, তারা রক্ত পাচ্ছে না- এ অবস্থায় মানুষের কষ্টগুলো তাদের সামনে যখন তুলে ধরি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে অবশ্যই তারা রক্তদানে উৎসাহিত হয়। অনেকেই নিয়মিত রক্তদান করে এবং অনেকেই আর্তমানবতার সেবায় সরাসরি কাজ করার জন্য আমাদের প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। তিনি আরো বলেন রক্তদানের পাশাপাশি নানা ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ড করে থাকি। যার মধ্যে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়ন,অসহায় মানুষের খাদ্য সামগ্রী নিজ তহবিল থেকে দান, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। যাদের দিকনির্দেশনা, অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় পথ চলার সাহস পেয়েছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।