• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • সারাদেশ

    এক হাসপাতাল পরিচালনায় একই পরিবারের ১০ জন

      মো আলামিন পাঠান, চাঁদপুর প্রতিনিধি: ১০ এপ্রিল ২০২৩ , ১২:৪৩:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

    এক হাসপাতাল পরিচালনায় একই পরিবারের ১০ জন রয়েছেন।একটি বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মুজিবুর রহমান।ওই হাসপাতালেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার স্ত্রী, পরিচালক ফুফাতো ভাই, আরেক পরিচালক তার শ্যালক। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের আসনে রয়েছেন তার বাবা, মা ও মেয়ে। আপন ছোট ভাই জেনারেল ম্যানেজার। জনসংযোগ কর্মকর্তা ও ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার মোঃ আবুল কালাম (আজাদ) তার আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। আর এভাবে একই পরিবারের সদস্য ও স্বজনসহ ১০ জন মিলে ৩০০ শয্যার বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতাল চালাচ্ছেন ডা. মুজিবুর। এছাড়া মাতুয়াইল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল সহ একই ব্যাক্তির একাধিক মালিকানাধীন হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটিতে পরিবারতন্ত্র চালু করেছেন ডা. মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এতে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের অন্যান্য পরিচালকরা। এ নিয়ে অন্যা

    পরিচালকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. মুজিবুর। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি সমালোচনা শুরু হয়েছে।

    সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডা. মুজিবুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এছাড়াও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ফুফাতো ভাই সাহাবুদ্দিন মিয়া, শ্যালক ডাক্তার আমিনুল ইসলাম, মেয়ে শিখা সুহাদা, বাবা আবুল কাসেম, মা আমেনা খাতুন, তার আপন ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম মেম্বার জেনারেল ম্যানেজার, জনসংযোগ কর্মকর্তা সাদিক আহম্মেদ বাবু, আত্মীয় ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার ওবায়দুল্লা মিয়া। এভাবে নিয়ম-নীতির উপেক্ষা করে একই পরিবারের ১০ জনকে দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা করার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

    সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সেখানে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. মুজিবুর রহমানের নামটি সরিয়ে স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমার নাম বসানো হয়েছে। তবে সকল সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের কাগজপত্রে তার নামটি চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক পরিচালক।

    সাইনবোর্ড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ডা. মুজিবুর রহমান ও তার আত্মীয়-স্বজনরা যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে অর্থ আদায় করছেন তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের ইচ্ছেমতো রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায় করছেন। যদি কোনো রোগী টাকা দিতে না পারেন, তবে তাদের নিয়োজিত গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হয়।
    সূত্র জানায়, মুজিবুর রহমানের স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে হাসপাতালটি একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা করছেন। তার আপন ছোটভাই শফিকুল ইসলাম মেম্বারকে হাসপাতালের সকল যন্ত্রপাতিসহ হাসপাতালের যাবতীয় কেনাকাটা দায়িত্ব দিয়ে লুটপাট চালাচ্ছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বিডিনিউজটুডে২৪.কমকে বলেন ডাঃ মজিবের ভাই শফিক মেম্বার ইতি মধ্যে অনেক টাকার মালিক বনে গেছে । এ ছাড়াও আত্মীয় পরিচয়দানকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সাদিক আহম্মেদ বাবু ও ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানাজার ওবায়দুল্লা মিয়াকে দিয়েও বিভিন্ন রকমের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

    মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে জানান, মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. মুজিবুর। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার কোনো অবস্থাতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় কোনো ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থাকতে পারেন না। একাধিক প্রতিষ্ঠানে তিনি দায়িত্ব পালনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাতুয়াইল শিশু ও মার্তৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা জানান, ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডাক্তার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি থেকে যান ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে তিনি পূর্বের চেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

    অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের এক পরিচালক বিডিনিউজটুডে২৪.কম কে জানান, মাতুয়াইল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মুজিবুর রহমান সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ব্যক্তি মালিকানা চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের দায়িত্বপালন করছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বে থাকতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

    নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সালমা খাতুন নামে এক রোগী জানান, বহু আশা নিয়ে এই হাসপাতালে আমার বাচ্চার চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলাম। এসে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা সারাজীবন মনে থাকবে। তারা মানুষের সাথে টাকার জন্য যে আচরণ করেন তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

    হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ফাতিহা খাতুন। তিনিও হাসপাতালের চেয়ারম্যানের পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি জানেন। তিনি জানান, ডা. মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মনীতি না মেনে যেভাবে ইচ্ছে ঠিক সেভাবেই হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। এতে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

    আব্দুল জাব্বার নামে এক ব্যক্তি জানান, সাদিক আহম্মেদ বাবুকে এই প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সকল প্রকার দালাল ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি সংবাদকর্মীরা ওই হাসপাতালের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের সাথে বাবু বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়।

    হাসপাতালের একজন পরিচালক আশিকুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বিডিনিউজটুডে২৪.কমকে জানান, ডা. মুজিবুর রহমানসহ আমরা পাঁচজন পরিচালক মিলে হাসপাতালটি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরবর্তিতে যখন দেখি তিনি তার স্ত্রী, ভাই ও স্বজনদের দিয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, এসব কাজের প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে মূল্যায়ন না করে ওনার একক সিদ্ধান্তে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। আমাদের হিসেব নিকেশও ঠিকমতো দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, এসব করে মুজিবুর রহমান রাজধানীর নিউ বেইলি রোডের এসও বেইলি নেস্টে দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকা মৌচাক মার্কেটে অন্তরা, অপ্সরা কমপ্লেক্স ভবনে একটি ফ্ল্যাট, গোপীবাগে ছয়তলা বাড়ি, মাতুইয়ালে দুটি প্লট করেছেন। এ ছাড়াও কানাডায় বাড়ি ক্রয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সবমিলিয়ে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা মুজিবুরের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।

    হাসপাতালের আরেক পরিচালক ডা. তানিয়া ইসলাম বিডিনিউজটুডে২৪.কমকে বলেন, যে আশা নিয়ে হাসপাতালটি করেছিলাম সেটা বাস্তবায়ন করার আগেই পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন ডা. মুজিবুর রহমান। এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাতুয়াইল শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালটি নিয়ম-নীতি মেনেই পরিচালনা করা হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানে কিভাবে আপনাদের পরিবারের একাধিক ব্যক্তি দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালটির বেশিরভাগ মালিকানাই আমাদের। তাই দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের বেশি পালন করতে হয়।

    নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য যেসকল নীতিমালা রয়েছে এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালটি নিয়ম মেনে পরিচালনা করছে কিনা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    আরও খবর

    Sponsered content