শাকিল আহমেদ নোয়াখালী : ১০ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:৪৫:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
ভ্রাম্যমাণ হকার আর সিএনজি ড্রাইভারদের দৌরাত্ম্যে নাকাল নোয়াখালীর ৯ উপজেলার জনগন।কুমিল্লা থেকে সোনাপুর ফোরলেন সড়কের কাজ শেষের পথে। ফোরলেন সড়কের কাজ যতই ঘনিয়ে আসছে,সড়ক দখল করে হকার আর সিএনজি ড্রাইভারদের দৌরাত্ম্যও ক্রমশ বেড়েই চলেছে।বৃহত্তর নোয়াখালীতে সড়ক দখলের মহোৎসব চলছে।মাঝে মাঝেই প্রশাসনের অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়।কিন্তু সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলেই আবার দখল করে নেয় হকাররা।
রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা সিএনজি ড্রাইভারদের আধিপত্য, অন্যদিকে রাস্তা দখল করে ভ্রাম্যমাণ হকারদের দৌরাত্ম, এই দ্বিমুখী চাপে সাধারন জনগন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন জেলা শহর মাইজদী সুপার মার্কেটের বিপরিত পাশে হকার্স মার্কেটের সামনের অংশে তাকালে মনে হবে ‘কাঁচাবাজার’।সড়ক দখল করে নির্মিতব্য এই কাঁচাবাজার “ঘুষ মার্কেট” নামে ব্যাপক পরিচিত। সড়ক দখল করে এসব তথাকথিত মার্কেট গড়ে তোলা এখন নোয়াখালীর প্রত্যেক উপজেলায় দৃশ্যমান চিত্র।এছাড়াও নির্মাণসামগ্রী সড়কের পাশে রেখেই বহুতল ভবনের কাজ করছেন স্হাপনা মালিকরা।এতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে আশংকাজনক হারে।
ফোর লেন সড়কের পাশে বড় বড় ছাতা টাঙিয়ে বিভিন্ন পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা।
সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতও তাদের দখলে।এতে করে সাধারণ মানুষের চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি সড়কে যানজটও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি টাকা বিনিয়োগ করা মুল ব্যাবসায়ীরা।হকারদের যথাযথ পুনর্বাসন করে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তারা।
পথচারি ফাহমিদা আক্তার আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনেই আমরা ফুটপাত দিয়েও হাঁটতে পারিনা,প্রতিনিয়ত আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে’।জামাকাপড়ের ট্রলি নিয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা হকার জসিম বলেন,আমরা কোই যামু?জিনিসপত্রের যেই দাম,আমরা বিক্রি না করলে খামু কি?’আরেক হকার জসিম বলেন,মাঝে মাঝে পুলিশ দৌড়ানি দেয়,এরপর পুলিশ গেলে আবার বসি যাই’।
জেলা শহর মাইজদী বড় মসজিদ মোড়ের ব্যাবসায়ী রাসেল বলেন’৪০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে দোকান নিয়েছি,কিন্তু দোকানের সামনের সড়ক হকাররা দখল করার কারনে ক্রেতা দোকানে ঢুকতে পারেনা।প্রতিবাদ করলে তারা একজোট হয়ে সাধারন ব্যাবসায়ীদের মারতে আসে”।
চৌমুহনীর ব্যাবসায়ী নুর রহমান বলেন”আমরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এসব হকারদের কাছে অসহায়’।তারা হকারদের যথাযথ পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের প্রতি আহবান জানান।
নোয়াখালী পৌর বণিক সমিতির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সোহান হতাশ কন্ঠে বলেন,আমাদের ব্যাবসায়ীরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দোকান দিয়েছে অথচ এসব হকারদের দৌরাত্ম্যে তারা আজ পথে বসে যাচ্ছে’।তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের জন্য পৌর মেয়র এবং জেলা প্রশাসকের প্রতি আহবান জানান।
এছাড়া সিএনজি ড্রাইভারদের আচরন আরো বেপরোয়া।জেলার অধিকাংশ সড়কের পাশেই অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে।বসুরহাট,কবিরহাট,সেনবাগ,চাটখিল,সোনাইমুড়ী, চৌমুহনী, সুবর্নচরসহ প্রত্যেক উপজেলায় একই চিত্র দেখা গেছে।এছাড়া জেলা শহর মাইজদীর সোনাপুর,বড় মসজিদ মোড়,পুরনো বাস স্ট্যান্ড, মাইজদী বাজার,সুপার মার্কেট সংলগ্ন কাউয়া রোড, প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক সহ প্রায় সব সড়কেই অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে।সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল উদ্দিন (সিএনজি কামাল) এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,রাস্তায় কিছু মানুষ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য লাঠিপেটা করে।তাদের জন্য ৫/১০ টাকা করে তোলা হয়’।
মুল সড়কের পাশাপাশি সংযোগ সড়ক গুলোও দখল করে রেখেছে এসব সিএনজি ড্রাইভাররা।প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনেই এরা বেপরোয়া আচরন করছে বলে জানান সাধারন মানুষ। প্রতিদিন হকার আর সিএনজি স্ট্যান্ডের নামে চলে নিরব চাঁদাবাজি।প্রতিমাসে কোটি টাকার উপর চাঁদা আদায় হয় এই খাতে।আর এই চাঁদার ভাগ পান কতিপয় রাজনীতিবিদ, সিএনজি নিয়ন্ত্রণকারী মালিক সমিতির নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য।প্রতিবাদ করলে একজোট হয়ে সাধারন মানুষের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার।
এবিষয়ে জানতে পৌর মেয়র শহিদুল্যা খান সোহেলের সাথে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।প্যানেল মেয়র রতন কৃষ্ণ পাল জানান,এবিষয়ে পৌর মেয়রের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে।তিনি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কে অনুরোধ করেছেন ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য।ঈদের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান যথাযথ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।