প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২৩ , ১২:১৬:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীর(১৪) বাল্য বিয়ের আয়োজন করার দায়ে ওই ছাত্রীর মা (৩৫) কে ১০হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল রবিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান এই দণ্ড দেন।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রীটি উপজেলার ডা.রফিক চৌধুরী জুনিয়র হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ওই ছাত্রীর সঙ্গে পাশের নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের শিশু মিয়ার ছেলে মাইদুল মিয়ার(২২) বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। বর যাত্রীদের আপ্যায়নের জন্য সামিয়ানা টানানো হয়। বরকে স্বাগত জানাতে কনের বাড়িতে তৈরি করা হয় গেইট। আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয় গরু ও মোরগ। রবিবার বেলা আড়াইটা থেকে কনের বাড়িতে শুরু হয় অতিথিদের খাওয়া দাওয়া।বিকেল পৌনে তিনটার দিকে বর এসে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন। স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মীর কাছ থেকে বাল্য বিবাহের আয়োজনের খবরটি জানতে পারেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও। তিনি খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এই বাল্য বিবাহটি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধর্মপাশা সদর ইউপি চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা হিমুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। ইউপি চেয়ারম্যান সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে কনের বাড়িতে গিয়ে এই বাল্য বিবাহের আয়োজনটি বন্ধ করার জন্য বলেন। এ সময় খবর রটে যায় যে কনের বাড়িতে ইউএনও নিজেই আসছেন। এমন খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর বর ও বরের লোকজন নৌকা যোগে কনের বাড়ি থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। বিকেল সোয়া চারটার দিকে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও। তিনি বাল্য বিয়ের আয়োজনের সত্যতা পান। পরে তিনি বাল্য বিয়ের কুফল ও এ ধরণের বিয়েতে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই মেয়ের মা, চাচা ও আত্বীয় স্বজনকে বিষয়টি বুঝিযে বলেন। মেয়ের বাবা সৌদি প্রবাসী। মেয়ের মা এই বাল্য বিবাহের আয়োজনের কথা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এবং সাংবাদিকসহ উপস্থিত লোকজনদের সামনে স্বীকার করেন। এমনকি ১৮বছরের আগে নিজের মেযেকে অন্যত্র বিবাহ দেবেন না বলে লিখিতভাবে তিনি অঙ্গীকার করেন। বাল্য বিবাহের আয়োজন করার দায়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ওই ছাত্রীটির মাকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়েটির মা বলেন,আমার মেয়ের ১৮বছরের আগে বিয়া দেওন যাইতোনা, এইডা আমার জানা আছিইন না। মেয়েটি বলে,আমি আরও পড়তে চাই।আমার জন্য দোয়া করবেন।
ডা.রফিক চৌধুরী জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার পাল বলেন, আমি এক পরিচিতজনের দাওয়াতে এই বিয়েতে গিয়েছিলাম। এই বিয়েতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজন শিক্ষকও গিয়েছিলেন। কনে যে আমাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রণির ছাত্রী এই বিষযটি আমার জানা ছিল না।
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা হিমৃ বলেন, আমি খবর পাওযার সঙ্গে সঙ্গে এক ইউপি সদস্যকে পাঠিয়ে বাল্য বিয়েটি বন্ধ করেছি। আমার ইউনিয়নে কোনো অবস্থাতেই বাল্য বিয়ে হতে দেব না।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা অলিদুজ্জামান বলেন,বাল্য একটি অপরাধ।স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এই বাল্য বিবাহটি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।বাল্য বিবাহের আয়োজন করায় কনের মাকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাল্য বিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে।