প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২৩ , ৭:২৬:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মো. জামিলুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি
জাতীয় ক্রীড়া ভাষ্যকার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার
বিশ্বকাপে বিস্ময়কর ক্রীড়া নৈপুণ্যে ৬টি ক্রিকেট দেশ বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে বলতে পেরেছে আমরাই তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের জন্ম ও বিকাশ হলেও ক্রিকেটকে ছন্দ, সৌন্দর্য, লাবণ্য ও সুষমা দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই ক্রিকেটকে আনন্দময় ও প্রাণোচ্ছল করে তোলার জন্য ক্যারিবীয়দের ভূমিকার কোন তুলনা হয় না।
ক্যারিবীয়ানরা ক্রিকেটে খুঁজে পান জীবনের নির্যাস, তাই হাসির ফোয়ারা বইয়ে দেন খেলার মাঠ থেকে শুরু করে প্যাভিলিয়ন হয়ে গ্যালারী পর্যন্ত। ক্যারিবিয়ানরা ক্রিকেট দেখেন দূর থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের গর্জন, হু হু করে বয়ে চলা বাতাস আর সারি সারি নারকেল বনের মধুর সঙ্গীতে, যা ক্যারিবীয় সরল মানবের প্রানতটে কল্লোলিত হয় সুর ও নৃত্যের ব্যঞ্জনায়!
আসলে ক্রিকেট-পৃথিবী রোমাঞ্চিত ও সংঙ্গীতময় হয়ে ওঠে সেই পঞ্চাশ দশক থেকে। ফ্রাঙ্ক ওরেল, এভারটন উইকস ও ক্লাইড ওয়ালকটের রানে ও গানে উছলে উঠে যে ক্যালিপসো সুর তাতে মুগ্ধ হতে থাকে সৌন্দর্য পিয়াসী ক্রিকেট অনুরাগীরা। তারা হৃদয় দিয়ে ক্রিকেট খেলে ক্রিকেটকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছেন সুর ছন্দ ও মাধুর্যে।
৫০ ও ৬০ দশক ক্যারিবীয় ক্রিকেটের শৈল্পিক সৌন্দর্য ও রূপ মাধুর্যে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি সত্তর আশির দশক ছিল তাদের রাজত্বকাল। ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বে গর্ডন গ্রিনিজ, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, ভিভ রিচার্ডস এবং মাইকেল হোল্ডিং এর মত দাপুটে ক্রিকেটাররা কাঁপিয়ে দিয়ে ছিলেন ক্রিকেট বিশ্ব। তাদের “ব্যাটে” ছিল যেমন সমুদ্রের ঢেউ তেমনি ‘বলে’ ছিল হ্যারিকেনের তাণ্ডব!
তাইতো ১ম ও ২য় বিশ্বকাপে তারা অবলীলায় জানান দেন ক্রিকেটের তাল-লয় সুর শুধু ক্যালিপসুরের বর্ণিল ক্রিকেট-ই দিয়ে থাকে। কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটের ডামাডোলে তারা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন ক্রিকেটের সুরে কখনো কখনো ভীষণ পরিবর্তন দরকার, নইলে সামনের পথ সরু হয়ে যায়।
তবে কি হালের টি-টোয়েন্টির মারকাটারীতে ধাতস্থ হয়ে তারা ভুলেই গিয়েছিল ক্রিকেটের জনপ্রিয় বসত ভিটা বা ওয়ানডের কথা? তা না হলে ভারত বিশ্বকাপে কেন নেই ব্রায়ান লারার উত্তরসুরী-ক্যারিবীয় নীল জলরাশির ক্রিকেট ফিনিক্সরা! তাইতো বিশ্বকাপে উইন্ডোজকে দেখতে না পেয়ে মনের অজান্তেই মুখে চলে আসে “শুধু নেই উইন্ডিজ”।
যে বিশ্বকাপে রয়েছে ক্রিকেটের ব্রাজিল, খেলছে পরা-শক্তির করিডোরে ঘুরতে থাকা ভারত, আন-প্রেডিক্টেবল পাকিস্তান, রানা তুঙ্গার শ্রীলংকা আর আতুর ঘরের ইংল্যান্ড। সেখানে কেন নেই ক্রিকেটের উরুগুয়ে! তারা কি থাকতে পারতো না? তাহলে কি এখন লয়েড, লারা, গেইলরা! শুধুই চাতক পাখির চাহনীতে দেখতেই থাকবেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০২৩! সমবেদনা! হায় শুধুই সমবেদনা এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য!