• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • খুলনা

    অভয়নগরে নিত্যপণ্যের মূল্য উর্ধ্বমুখী দিশেহারা মানুষ; চলে না সংসারের চাকা

      প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৩ , ১০:১৬:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি

    যশোরের অভয়নগরে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দিনের পর দিন ভুগছে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও। দামের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে আলু, ডিম ও পেঁয়াজ। এর মধ্যে রাজনৈতিক কমসূচিতে নতুন করে বিপাকে পড়তে হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। ফলে সংসার চালানো রীতিমতো যুদ্ধের চেয়েও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানায় দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। শনিবার (১৮ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বললে এসব চিত্র তুলে ধরেন তারা।
    চেঙ্গুটিয়া বাজারে কথা হয় সবজি বিক্রেতা মন্টু খানের সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশের বেশি। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মন্টু খান বসে আছেন তার সবজির দোকানে। কিছু সাদা পুঁই, ডাঁটা ও পাটশাক নিয়ে। তিনি জানান, সাতজনের সংসার। তিনি শাক বিক্রি করে ৩০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। কোনো দিন ২০০ টাকাও আয় হয়। এক আঁটি পাটশাক ২৫ টাকা। ডাঁটা এক মুঠো ২০ টাকা। মানুষ নিতে চায় না। এ সময় দাম কমার কথা থাকলেও হরতাল-অবরোধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন হচ্ছে।
    ইসমাইল। ১৭ বছরের তরুণ। পেশায় অটোচালক। গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার কালীবাড়ি। তিনি নওয়াপাড়া বাসা ভাড়া করে থাকেন নওয়াপাড়া এলাকার একটি গ্যারেজের ইজিবাইক ভাড়ায় চালান। দৈনিক ইজিবাইক ভাড়া ৪০০ টাকা। মাসে ৯/১০ হাজার টাকা আয় করতেই কষ্ট হয়। মেসে খাওয়া বাসা ভাড়া খরচ। টেনেটুনে মাস চালানো দায় হয়ে যায় বলে সে জনান।
    নিম্ন আয়ের মানুষ ছাড়াও চাকরি করেন তাদের চিত্রও প্রায় একই রকম। আব্দুল হামিদ ৯ বছর ধরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করছেন। সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। বাসাভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেই বেতনের অর্ধেক টাকা শেষ। বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে চলে তার সংসার। একাধিক চাকরিজীবী জানান, বেশিরভাগ মানুষের বেতনসীমা ১০ থেকে ১৫ হাজারের ঘরে। আজ থেকে ৫/৬ বছর আগে সেই টাকায় মোটামুটি সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। এখন এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দামই দ্বিগুণ কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের সঙ্গে বাসাভাড়া, সন্তানের পড়াশোনার খরচ, যাতায়াত ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ টাকা শেষ। বাকি সময়টা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে করে চলতে হচ্ছে।
    খুচরা বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায়, রসুন ১৮০ টাকা, আদা ২০০ টাকা এবং সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা। এ ছাড়া বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। এ ছাড়া পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। অপরদিকে বাজারে বর্তমানে ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই।
    অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ী তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন না। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনেন। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই।
    অন্যদিকে উপজেলা বা কৃষি বিপণন ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও বাজার মনিটরিং করার নিয়মিত কোন পদক্ষেপ না থাকার কারণে নওয়াপাড়ার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া ভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে অভয়নগর উপজেলাবাসীর বোবা কান্নার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে বলে একাধিক খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করাসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সচেতন মহল দাবি করেছেন। এব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আবু নওশাদ বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব সময় চেষ্টা করা হচ্ছে কেউ যদি অবৈধ সিন্ডিকেট করে মূল্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    আরও খবর

    Sponsered content