ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি: ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৫:৩৯:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানা পুলিশের সদ্য সাবেক পরির্দশক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই মামলায় আদালতে দুই রকম তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি রাঙামাটি জেলায় বদলি হয়েছেন। বদলির আগে আশুগঞ্জের আর. জে. টাওয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের একটি মাদক মামলায় আদালতের চাওয়া প্রতিবেদন ও অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) দুই রকম তথ্য দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর র্যাব-১৪ এর কিশোরগঞ্জের ভৈরব ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোল চত্বর সংলগ্ন আর. জে. টাওয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ জব্দ করে। এ ঘটনায় মাদক কেনাবেচার অভিযোগে ৩৯ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র্যাব। ওই মামলায় আদালতের বিচারক উদ্ধারকৃত মদের মালিকানা ও বৈধতা যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আশুগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। এরপর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম গত ২০ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আর. জে. টাওয়ারকে জেলা প্রশাসন ‘এফ’ মানের লাইসেন্স ইস্যু করে এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ‘তিন’ তারকা মান প্রদান করা হয়। এ হোটেল ও রিসোর্টটি ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বারের অনুমোদন পায়। এতে মদ জাতীয় পানীয় ৩ হাজার লিটার মজুত করার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে পরিদর্শক মনিরুল র্যাবের অভিযানে জব্দকৃদ মদ ও মদ জাতীয় পানীয়গুলো ক্রয়/আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের অনুমতি, ভ্যাট, চালান ও রেজিস্টারসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে একই মামলায় গত ১১মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল। অভিযোগপত্রে তিনি জব্দকৃত মদ ও মদ জাতীয় পানীয়কে অনুমোদনহীন উল্লেখ করেন। এছাড়া আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে পরিদর্শক হিসেবে স্বাক্ষর করলেও অভিযোগপত্রে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
আর. জে. টাওয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক সরওয়ার শফিক বলেন, আমাদের হোটেলে মদের বারের অনুমোদন আছে। অনুমোদিত মদ-বিয়ার অবৈধ হয় কীভাবে? আমাদের এখানে বিদেশিরা ছাড়াও যাদের মদ পানের লাইসেন্স আছে, তাদের মধ্যে থেকেই কয়েকজন সেদিন (অভিযানের দিন) বারে মদ পান করতে এসেছিলেন। আর আবাসিকে থাকা অতিথিরা এসেছিলেন নাস্তা করতে। অথচ ডোপ টেস্ট ছাড়াই তাদেরকে মদ সেবনকারী হিসেবেআটক করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে উদ্ধার হওয়া মদ বৈধ এবং বিক্রয় করা অবৈধ লিখেছি। আর অভিযোগপত্রে সাব-ইন্সপেক্টর ভুলে লেখা হয়েছে।
একই মামলায় পরিদর্শক মনিরুলের দুই রকম প্রতিবেদন ও চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে সরাইল সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, জব্দকৃত মদগুলো তারা (আর. জে. টাওয়ার কর্তৃপক্ষ) নিয়ম মেনেই ক্রয় করেছিল- প্রতিবেদনে এমন উল্লেখ করা হয়েছিল। মালিকানার দিক থেকে বৈধ ছিল। কিন্তু যাদের কাছে মদ বিক্রি করা হয়েছিল, তাদের কারোরই মদ কেনার অনুমোদন ছিল না। সেজন্য চার্জশিটে অবৈধ উল্লেখ করা হয়েছে।