• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • রাজশাহী

    জয়পুরহাটে তেলের অভাবে বন্ধ সরকারি অ্যাম্বুলেন্স, বেসরকারিতে লাগে দ্বিগুণ ভাড়া

      প্রতিনিধি ২১ মে ২০২৩ , ৯:৩০:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ আব্দুল হাই জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি

    জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে জ্বালানি তেল সংকটের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকায় হাসপাতালের মুমূর্ষ রোগীকে দূরবর্তী কোনো হাসপাতালে নিতে পারছেন না রোগীর স্বজনরা। এদিকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গরিব ও দুস্থ রোগীদের।

    আধুনিক জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চারটি অ্যাম্বুলেন্স, তত্ত্বাবধায়কের জিপগাড়ি ও জেনারেটর রয়েছে। এসব গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে অকটেন তেল ব্যবহার করা হয়। এই অর্থ বছরের শুরুতে প্রতি বছরের জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি অর্থ বছরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর তেল কেনা সীমিত করায় এবং অর্থ বছর শেষ হওয়ার প্রায় তিন মাস আগেই বরাদ্দের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেল সংকটে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

    সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ১০ টাকা। জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার নির্ধারিত ভাড়ার ১ হাজার ২০০ টাকা, রংপুরের ভাড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা, দিনাজপুরের ভাড়া ১ হাজার ৮২০ টাকা, রাজশাহীর ভাড়া ২ হাজার ৬৪০ টাকা (পাহাড়পুর হয়ে) এবং ঢাকার ভাড়া ৫ হাজার ৬০০ টাকা। আর বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার নির্ধারিত ভাড়ার ছোট অ্যাম্বুলেন্সে ১ হাজার ৮০০ টাকা, বড় অ্যাম্বুলেন্স নন এসিতে ২ হাজার ২০০ টাকা ও এসিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুরের ভাড়া প্রায় একই। এসব স্থানে গেলে ছোট অ্যাম্বুলেন্সে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা, বড় নন এসিতে ৪ হাজার ৫০০ টাকা ও এসিতে ৫ হাজার টাকা এবং ঢাকায় গেলে ছোট অ্যাম্বুলেন্সে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা, বড় অ্যাম্বুলেন্স নন এসিতে ১২ হাজার টাকা ও এসিতে ১৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

    হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে থেকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা সীমিত করা হয়। গত এক মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রোগীদের স্বজনেরা হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করলে। অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা তাদের জ্বালানি তেলের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলে। এ কারণে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসায় রোগীদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে।

    নওগাঁর বদলগাছীর মিঠাপুর এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত মন্ডল বলেন, আমার বাবাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। চিকিৎসকেরা বাবাকে দ্রুত ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রেফার করেছিলেন। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যোগাযোগ করি। তারা ১৩ হাজারের কমে ঢাকায় যাবে না। পরে ৮ হাজার টাকায় বগুড়া থেকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স এসে ঢাকায় নিয়ে যায়। বগুড়া থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসায় জয়পুরহাটের অ্যাম্বুলেন্স চালকরা গাড়ি যেতে বিলম্ব করায়। এমনকি ওই চালকের কাছ থেকে কিছু টাকা নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্স ছাড়ে।

    পাঁচবিবি উপজেলার কয়তাহার গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে বগুড়ায় নিয়ে গেছি। এতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে ৮০০ টাকা ভাড়া বেশি লেগেছে। তেলের কারণে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।

    জয়পুরহাট শহরের চিত্রাপাড়ার বাসিন্দা সৌরভ কুমার মন্ডল বলেন, বাবাকে হাসপাতালে ভর্তির পর দ্রুত ঢাকায় নিতে বলে চিকিৎসক। ঢাকায় নেওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের খবর নিলে অ্যাম্বুলেন্স দূরের পথে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে কথা বললে তারা ১৩ হাজার টাকা চায় পরে ১২ হাজারের কমে যাবে না জানায়। তাদের নাকি সমিতি আছে, আর এটিই নির্ধারিত ভাড়া। কিন্তু বগুড়া থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে ৮ হাজার টাকায় ঢাকা নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু জয়পুরহাটের অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ওই গাড়ি আসতে দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে ১২ হাজার টাকায় জয়পুরহাটের অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে।

    জানতে চাইলে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক সুজন হোসেন বলেন, বর্তমানে অকটেন তেল ১৩৫ টাকা লিটার। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। তাছাড়া একেকটা গাড়ির দাম ১২ লাখ, ১৩ লাখ, ১৬ লাখ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আর অন্য কোনো স্থানের অ্যাম্বুলেন্স এসে রোগী বহন করলে রোগীদের থেকে ঘুরে ফিরে তারা আমাদের সমানই টাকা নেয়।

    সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক কাজল হোসেন বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেলের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় মার্চ মাস থেকে টানাপোড়েন শুরু হয়। তারপরও চারটি অ্যাম্বুলেন্স সীমিত আকারে চলেছে। তত্ত্বাবধায়ক স্যারের নির্দেশর এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ থেকে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ইঞ্জিন যেন বিকল না হয় এজন্য মাঝে মধ্যে কাছের কোনো গরিব পরিবারের কেউ মারা গেলে মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হয়।

    জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, চলতি অর্থ বছরে ২৪ লাখ টাকা তেলের বরাদ্দ ছিল। হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সীমিত করা হয়। এরপর বরাদ্দের অর্থ না থাকায় আমরা আর চালিয়ে নিতে পারছিলাম না। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে আবারও অ্যাম্বুলেন্স সেবা সচল হবে। আর আগামী অর্থ বছরের জন্য ৫৫ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

     

     

    আরও খবর

    Sponsered content