প্রতিনিধি ২২ জুলাই ২০২৩ , ৩:০৬:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মুকুল বসু বোয়ালমারী প্রতিনিধি :
শত বছর অতিক্রম করতে আর মাত্র কয়েকটি বসন্ত অবশিষ্ট রয়েছে তবুও মনোবল ও ইচ্ছা শক্তি যেন গগন ছোঁয়া আকুব্বর ওরফে আকবর আলীর, সংসারে স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ নেই, পৈত্রিক যে সম্পত্তি ছিল সেটাও দান করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ এবং মাদ্রাসায় দ্বীনি শিক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন দীক্ষিত হতে পারে l সরকারি কোন অনুদান গ্রহণ করতে তিনি মর্যাদা হানিকারক বলে মনে করেন অন্য মানুষের দান গ্রহণের বিষয়টি সেখানে প্রশ্ন অতীত মাত্র।গুণবহা ইউনিয়নের হরিহর নগর গ্রামনিবাসী এই বৃদ্ধ জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিয়েছেন “ঘষি’ (গোবরের তৈরি লাঠি ব্যবসা) কে যেটা জ্বালানির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে নিজের ভ্যান গাড়ি ভর্তি করে “ঘষি” বিক্রয়ের জন্য ঘুরে বেড়ান বোয়ালমারী পৌরসভার বিভিন্ন অলি-গলি ,বাসা-বাড়ি ও দোকানে। নির্দিষ্ট কিছু নিয়মিত ক্রেতাও রয়েছে যারা শুধু তার কাছ থেকেই “ঘষি” ক্রয় করে থাকেন।এই বৃদ্ধের পরনে থাকে একজোড়া রাবারের স্যান্ডেল ,পাঞ্জাবি- পাজামা আর মাথায় সাদা টুপি।আকবর আলীর ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে বার্ধক্যে নুইয়ে যাওয়া দীর্ঘ দেহটি ,হাত দুটি কাঁপছে তবুও ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে রাখেন শক্ত করে যাত্রার নিয়ন্ত্রণ যেন সঠিক পথে থাকে , হালাল উপার্জন করে নিজের এবং স্ত্রীর রুজি-রুটির ব্যবস্থা করে জীবন অতিবাহিত করবেন এটাই যেন আকবর আলীর এক ” অনবদ্য প্রতিজ্ঞা “। যে স্থানে আযানের ধ্বনি শুনতে পান সেখানেই নিকটবর্তী মসজিদের কাছে তিন চাক্কায় চালিত ভ্যানটি রেখে সালাত কায়েমের উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করেন।অন্যদিনের ন্যায় সেদিনও শুকদেবনগর বটতলা প্রধান সড়কের মসজিদের পাশে যথারীতি ভ্যানটি রেখে এশার নামাজ কায়েম শেষে বাইরে এসে দেখেন ভ্যানটিকে আর নির্দিষ্ট জায়গাতে নেই ,আশেপাশে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেও কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি। দিনমজুর আকবর আলীর
হালাল রুজি উপার্জনের একমাত্র
অবলম্বন ভ্যানটি “ভোগে ” চলে গিয়েছে ! আকবর আলী ছল -ছল চোখে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে কতশত ভ্যান চলাচল করছে, বয়সের ভারে নুইয়ে যাওয়া কুয বৃদ্ধ নিরুপায় হয়ে তালতলা মিঞার মোড়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি দিয়ে ভ্যানটিকে সন্ধান করছেন, নিজের ভ্যানের সাদৃশ্য খুঁজছেন অন্যের ভ্যানের সাথে।
তার সম্পর্কে যুবলীগনেতা গালিবুর রহমান মিয়া বলেন- অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ।আমি তাকে জন্মের পর থেকেই এই ব্যবসায় দেখছি।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নি:সন্তান।তার স্থাবর সম্পদ মাদ্রাসায় দান করেছেন।
গুনবহা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্যা বলেন,আমি প্রায় ৪০বছর যাবত সরকারী রেশনের চাউলের ডিলার।কিন্তু কখনও তাকে দেখিনি চাউলের লাইনে।তিনি বৃদ্ধ হলেও পরিশ্রম করে খান,কারও কাছে হাত পাতেন না।
আকবর আলীর জলে সিক্ত প্রবীণ চোখ দুটি প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দিচ্ছে সমাজের প্রতি “যে সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দ্বীনি শিক্ষায় দীক্ষিত ” করার জন্য সর্বস্ব দান করেছেন অথচ সেই সমাজের লোকেরাই জানে না নিঃসন্তান আকবর আলীর শেষ বয়সের একমাত্র অবলম্বন ভ্যান টি আজ কোথায় ?