প্রতিনিধি ২৯ জুলাই ২০২৩ , ৫:৩৫:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
এম. জুলফিকার আলী ভুট্টো, বিশেষ প্রতিনিধি-
ক্রীড়া ধারাবর্ণনা নিঃসন্দেহে একটি বিশেষায়িত শিল্প। বাংলাদেশের গোড়ার দিকে বাংলায় এই শিল্পের চর্চা যাদের হাত ধরে এগিয়েছে , তাদেরকে আমরা বর্তমান প্রজন্ম কতটা জানি হয়তো অনেকে তাদের নামটি পর্যন্ত শুনিনি। আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সঠিক ভাবে না জানি বা তাদের জীবনাদর্শ চর্চা না করি তাহলে আমরা নিজেরা বড় হবো কি করে। তরুণ প্রজন্মের কাছে পূর্বসুরী ক্রীড়া ভাষ্যকারদের ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরবার প্রয়াস থেকে আজ জানবো বেতার ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় ক্রীড়া ভাষ্যকার মোহাম্মদ মুসা সম্পর্কে। মোহাম্মদ মুসা, জন্ম ১ নভেম্বর ১৯৪৮ খ্রি, মৃত্যু ১৭ জানুয়ারী ২০১৩ খ্রি. সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সকলের প্রিয় মোহাম্মদ মুসা তাঁর নম্রতা, ভদ্রতা আর বিনয়ের জন্য অধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। অজাতশত্রু এই মানুষটি খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতেন বন্ধুর মতো।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার বারাসাতে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ মুসার পিতা মো. মোসলেম আলী এবং মাতা মহিদুননেসা খাতুন। মতিঝিল সেন্ট্রাল গভঃ বয়েজ হাই স্কুলেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এস.সি এবং বি.এস.সি পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা এবং এম.এ পাশ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি এবং এ্যাথলেটিকসের বিভিন্ন ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেতেন। ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতা পেশার সাথেও যুক্ত হন। মোহাম্মদ মূসা বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির আজীবন সম্মাননা পাওয়া একজন সদস্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বেতারে এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ বছর ব্যাপী তিনি ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছেন। ফুটবল, ক্রিকেট এবং হকিসহ যে কোন ইভেন্টেই ভাষ্যকার হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই সাবলীল।
সংশ্লিষ্ট খেলা সমন্ধে প্রচুর হোমওয়ার্ক, পরিসংখ্যান সংগ্রহ এবং উপস্থাপনে তিনি ছিলেন অনন্য। বিভিন্ন বিখ্যাত মনিষীদের উক্তি, নানা রকম উপমা-উদাহরণ, স্মৃতি রোমন্থন করতেন তাঁর ধারাভাষ্যে, যা তাঁকে খুব সহজেই অন্যদের চেয়ে আলাদা করে চেনাতো শ্রোতা-দর্শকদের কাছে। ঢাকার মাঠের অনেক কালজয়ী খেলার বর্ণনা তিনি বেতারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন ইথারে।
তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় স্মরণ করছি।