• Archive Calendar

    সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
     
    ১০১১১২
    ১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
    ২০২১২২২৩২৪২৫২৬
    ২৭২৮  
  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • চাকরি-বাকরি

    কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে কোটিপতি

      মোঃ আঃ রহিম জয় স্টাফ রিপোর্টার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৭:১১:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

    পান্না বিশ্বাস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ) হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী ও অত্র দপ্তরের সিবিএ নেতা কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে কোটিপতি ও বিআইডব্লিউটিএতে সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাসের অবিশ্বাস্য দাপটের অভিযোগ। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিআইডব্লিটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে অপরাধ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে রেখেছেন তিনি। পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মক্ষেত্রেই নয়, চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আর এসবের আড়ালে থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধর করে জেলখাটাসহ বহু কু-কর্মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। ভারতে ঠাকা পাজারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বিদেশে টাকা পাচার ও সম্পদের পাহার গড়ে তোলা, মাদক গ্রহণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধরসহ এহেন অপরাধ নেই যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায় না। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিটিএ’র সুনাম ক্ষুন্নকারী এই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী পান্নার অপকর্ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র উঠে এসেছে। পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বিভিন্ন দপ্তরে । ওই অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, পান্না বিশ্বাস ২০১২ সালে বিআইডব্লিউিটএতে হিসাব বিভাগে সহকারী পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর প্রভাব দেখানোর জন্য মাদারীপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে পান্না বিশ্বাস কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তার সর্বসাকুল্যে বেতন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি রাজধানীর টিকাতলীর হুমায়ুন কমপ্লেক্সের পাশের লেনে যে ভাড়া বাসায় থাকেন তার মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলে মাসে তার সংসারে ব্যয় কমপক্ষে লাখ টাকার বেশি। আয় ও ব্যয়ের এই ব্যবধান থেকে বোঝা যায় কোন পথের উপার্জনে তার সংসার চলে। লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ আছে, পান্না বিশ্বাস নিজের নামে না রেখে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভারতের নাগরিক ভাইয়ের নামে ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর করে রেখেছেন অবৈধ উপার্জনের কোটি কোটি টাকা। ভারতেও তার সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা পাচার করছেন ভারতে। তার ভাই রাহুল দেব বিশ্বাস ভারতের নাগরিক। তার আরেক ভাইয়ের স্ত্রীর নাম তাপসী বিশ্বাস, যিনি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। তার মাধ্যমেই মূলত অর্থ পাচার করে থাকেন পান্না বিশ্বাস। এছাড়া শাশুড়ির নামে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন পান্না বিশ্বাস। গাড়িও কেনা আছে শাশুড়ির নামে। মাদারীপুরে বোনের নামে বাড়ি কেনা আছে পান্না বিশ্বাসের। গোপালগঞ্জ মকসুদপুরে আলিশান বাড়ি করেছেন। এছাড়া একাধিক জমি ক্রয় করা আছে তার। বর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির পাহাড়সম অভিযোগ আছে পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। প্রতি মাসে সদরঘাট, চাঁদপুর, আরিচা, বরিশাল ঘাট থেকে চাঁদা দিতে হয় পান্না বিশ্বাসকে। এছাড়া বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। তানিয়া এন্টার প্রাইজ, দীপিকা ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না ট্রেডিংসসহ বেনামে আরো কিছু ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন পান্না বিশ্বাস। ক্ষমতাসীনদের ভুল বুঝিয়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। ইতিপুর্বে বিআইডব্লিউটিএর সাইনবোর্ড ডিজিটালকরণের ২৫ লাখ টাকা রাসেল এন্টার প্রাইজের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়, এটি মূলত পান্না বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামক ২টি প্রকল্প থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পান্না বিশ্বাস। এসব তথ্য অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে।
    জানা গেছে, রাজধানীতে রফিক ঠিকাদার নামে এক যুবদল নেতার বাড়িতে মাদকের আডডায় নিয়মিত যোগ দেন পান্না বিশ্বাস। মতিঝিলে বিআইডব্লিউিটএ’র প্রধান কার্যালয়ে একটি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন পান্না বিশ্বাস। কারো তোয়াক্কা না করে সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন। একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়। সরকার যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে পান্না বিশ্বাস নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে যাচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিএতে নিয়োগ পাওয়া অনেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন পান্না বিশ্বাস। এর মধ্যে রয়েছে নড়াইলের সুজন মোল্লা ও লস্কর অন্যতম। এছাড়া, আলামিন লস্করকে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেয়ারার পদে জুয়েল সরদার, শুল্ক প্রহরী পদে জয়দেব পাল, ট্রাফিক সুপারভাইজার পদে অনিমেষ বৈদ্য, দেবাশীষ মিত্র, বার্লিং সারেং পদে মো. আমিনুর রহমান, এমএলএস পদে মো. কুদ্দুস মোল্লা, সমীর গাঙ্গুলী, অমিত চাকমা, নিরপাত্তা প্রহরী পদে তুষার কান্তি ঘোষ, শঙ্কর বিশ্বাসকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন পান্না বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকারও অভিযোগ আছে পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। ১১ দফা দাবি আদায়ে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ধর্মঘট দীর্ঘায়িত করতে ইন্ধন যোগায় পান্না বিশ্বাস। ধর্মঘটে সহযোগিতার পুরষ্কার হিসেবে সম্প্রতি তাকে নৌযান শ্রমিকলীগ নামে সদরঘাট কেন্দ্রীক ওই সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে। চাকরিবিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী হয়ে এ ধরনের কোনো সংগঠনে থাকার বৈধতা তার নেই। এরপরও পান্না বিশ্বাস সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সেই সংগঠনেই জড়িত। চাকুরি জীবনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে মারধর, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছিলেন পান্না বিশ্বাস। অপকর্মের কারণে জেলও খেটেছেন অনেকবার। তার সেই অস্ত্রবাজি এখনো বহাল রয়েছে। হিসাব বিভাগের রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাসকে মারধর করায় পান্না বিশ্বাসের নামে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাও হয়েছে (মামলা নং ১৫৯৭/২০১৭)। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। ফ্লুুটিং শাখায় কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক (ড্রাইভার-১) ও মনির চৌধুরীকে (মাস্টার-১) মারধর করে জখম করেন পান্না বিশ্বাস। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অফিস সহকারী দিদার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পান্না। সারাদেশে রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাহাজের পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলির আদেশ দেয়া হয়। এসব পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলি ঠেকাতে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পান্না বিশ্বাস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ও নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো বহাল তবিয়তে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত তিনি। এতো অপরাধ করার পরেও তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএতে কথা বলার সাহস পায় না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এহেন অপরাধ নেই যে পান্না বিশ্বাস করছেন না। এসব নিয়ে কথা বললে সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন প্রসঙ্গে পান্না বিশ্বাস।

    আরও খবর

    Sponsered content