• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • অর্থনীতি

    পাহাড়ী জনপদে কৃষি কাজে কৃষক মাঠ স্কুলের ভূমিকা

      এম. জুলফিকার আলী ভূট্টো, বিশেষ প্রতিনিধি- ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:১৩:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

    বিগত দিনে পাহাড়ী জনপদে ড্যানিডার সহায়তায় পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় কৃষি কাজের সাথে জড়িত দরিদ্র ও হত-দরিদ্র উপজাতি, অ-উপজাতি কৃষকদের কৃষিজ ফসল উৎপাদনের জন্য উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করার লক্ষ্যে প্রায় প্রতিটি পাড়ায় একটি করে কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে এ প্রকল্প কাজ করে আসছিল।

    পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি কর্তৃক পরিচালিত, স্ট্রেনদেনিং ইনক্লসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন সিএইচটি (এস আই ডি-সিএইচটি) বাস্তবায়নাধীন সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালিত হয়েছিল। এতে প্রথমত কৃষক মাঠে স্কুল গঠন করার লক্ষে এই প্রকল্প একটি পাড়াকে সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে, পাড়া চিহ্নিত করার পরে প্রকল্প কর্তৃক নিযুক্ত একজন ফারমার ফ্যাসিলিটেটর (এফ এফ) যা বাংলায় কৃষক সহায়ক তিনি ওই পাড়াটি পরিভ্রমণ করে, সামাজিক সম্পদের মানচিত্র অংকন ও খানা জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন।

    গ্রাম পরিভ্রমণ, সামাজিক সম্পদের মানচিত্র অংকন ও খানা জরিপ শেষে ওই পাড়ায় অবস্থিত দরিদ্র, হত-দরিদ্র ও এই প্রকল্পের উন্নত প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করার আগ্রহী কৃষকদের মধ্য থেকে ওই পাড়া হতে ২৫ থেকে ৩০ টি পরিবারকে বাছাই করে তালিকাভুক্ত করা হয়।

    গ্রাম পরিভ্রমণের কারণ হলো নির্দিষ্ট এলাকা বা পাড়া সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে জানা ও প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূমির ব্যবহার, কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান ইত্যাদির প্রাথমিক ধারণা লাভ করা যায়। কৃষক মাঠ স্কুলের সদস্যরা দলগত ভাবে নিজ এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে উৎসাহিত হয়। খানা বা পরিবার জরিপ আগ্রহী কৃষক-কৃষাণীদের তালিকা থেকে আই এফ এম, এফ এফ এসের জন্য উপযুক্ত কৃষক-কৃষাণী নির্বাচন ও তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা জানার জন্য খানা বা পরিবার জরিপ পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

    এই খানা বা পরিবার জরিপ থেকে জানা যায় এই পাড়ায় মোট কৃষক পরিবার সংখ্যা কত? ছোট, বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবার কত? পরিবার প্রতি গড়ে লোক সংখ্যা কত জন? মোট আবাদী জমির পরিমাণ কত? এক ফসলী দো-ফসলী জমির পরিমাণ কত? এলাকার সেচ সুবিধা কেমন? কত ভাগ জমি সেচের আওতায়? গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপের সংখ্যা কত? ভূমির শ্রেণী বিভাগ ও উর্বরতার ধরণ? পাড়ায় মসজিদ, মন্দির, কিয়াং, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল কি কি আছে।

    কৃষক মাঠ স্কুল গঠন: কৃষক সহায়কগণ নির্বাচিত পাড়ায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে সভার দিন তারিখ ঠিক করে সবাই অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানান এবং সভায় পাড়াবাসী সকলে উপস্থিত থাকেন তারও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন একজন কৃষক সহায়ক। উপস্থিত সভায় একজন কৃষক সহায়ক পার্বত্য অঞ্চলে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সবাইকে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করেন, কৃষক মাঠে স্কুল গঠন সম্পর্কে আলোচনা করেন ও সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কি? সে সম্পর্কে পাড়াবাসীকে অবহিত করেন এবং কৃষক মাঠ স্কুল গঠনের জন্য আগ্রহী কৃষকের প্রাথমিক নামের তালিকা তৈরি করেন।

    সূত্রমতে-ইন্দোনেশিয়ায় সর্বপ্রথম কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম ১৯৮৯ সালে শুরু হয়। বর্তমানে এশিয়ার নানা দেশে এই কৌশল দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সীমিত আকারে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে। পরে সেসব স্কুলের সফলতা এবং প্রশিক্ষণের গ্রহণ যোগ্যতার কারণে পরবর্তীতে এ দেশে সরকারি ও বে-সরকারি অনেক সংস্থা কৃষক মাঠ স্কুল প্রতিষ্ঠা করে টেকসই কৃষি উন্নয়নের সূচনা করে।

    দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে ধান ও সবজি ফসলের আইপিএম এফএফএস চলে আসছে, এফএফএস করতে গিয়ে দেখা যায় কৃষকের শুধু ধান নয় একই সাথে মৎস্য, প্রাণি সম্পদ, শাক সবজি, ফল ইত্যাদি বিষয়েও সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।

    তাই, পার্বত্যাঞ্চলে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের ড্যানিডার সাহায্যপুষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ কম্পোনেন্ট ও আঞ্চলিক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সম্পদ উন্নয়ন কম্পোনেন্টের সহায়তায় প্রথম পার্বত্য অঞ্চলে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষক মাঠ স্কুলের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের সফলতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশব্যাপী ‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক মাঠ স্কুল’ বা সংক্ষেপে “আইএফএম, এফএফএস” কার্যক্রম বতর্মানে বন্ধ আছে এই প্রকল্প পূনরায় চালু করা উচিত বলে মনে করেন পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা।

    আরও খবর

    Sponsered content