ব্যুরে চীফ, সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি : ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৫৭:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
মৌলভীবাজার জেলা শ্রীমঙ্গল উপজেলা ০৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন ০৪ নং ওয়ার্ড মাজদিহি চা বাগানে নিহত লক্ষী কালিন্দি (৪০) তিন সন্তানের জননী ,স্বামী মৃঃ সুকরাম কালিন্দি বিগত প্রায় ১ বছর পূর্বে মারা গেছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছোট্ট টং দোকান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
০৪’ই এপ্রিল ২০২৩ইং রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৪.০০ ঘটিকার সময় ড্রেনের/ নালার মাটি কাটার বিষয় নিয়ে কথা বাকবিতন্ডায় শেষে বাড়ি ফিরতি অবস্থায় বিশনাথ সাঁওতাল(৬০) নারী লক্ষী কালিন্দি(৪০) কে তার দোকানে সামনে কোদাল দিয়ে মাথার পিছনে দুই/ তিন কুপ মেরে আহত করে পরে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকাল ৫.০০ ঘটিকার সময় কর্তব্যরত ডাক্তার কিছুক্ষণ পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ০৫’ই এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পোষ্ট-মর্টেম শেষে নিহত শরীর আইনের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে দাহ কার্যের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আহত হয়েছেন রামদুলারী নুনিয়া (৪০) স্বামী রামকিষোণ নুনিয়া, ছেলে সজীব নুনিয়া (২০) পিতা : রাম কিষোণ নুনিয়া, মাজদিহি চা বাগান, ০৪ নং ওয়ার্ড, ০৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, মৌলভীবাজার জেলা।
নিহত নারী লক্ষী কালিন্দি’ র ছোট ছেলে রাজকিশোর কালিন্দি বলেন আমার মা আমাকে টাকা দিয়া বলতেছে বাজার থেকে দোকানের জন্য সিগারেট নিয়ে আস। আমি আসার পর দোকানে দেখি আমার মা’ র মাথা দুই পাশ ফাটা পড়ে আছে। আমার মা’ রে কোলে নিয়ে আমার বড় ভাইয়ের ডাকি তখন দেখি আমার মারে মারছে বিশনাথ সাওতাল সে আরেক বাড়িতে গেছে কোদাল নিয়া মারামারি লাগতে গেছে। পরে আমি, বড় ভাই, লালন নুনিয়া, শিবা পাশিসহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়া যাই।
আহত রামদুলারী নুনিয়া-৪০( স্বামী মৃত রামকিষোণ নুনিয়া) বলেন আমি বাড়িতে ভাত খাইতেছিলাম হঠাৎ শুনি চিল্লা চিল্লি( চিৎকার) শুনে বাইরে বের হয়ে দেখে লক্ষী কালিন্দি’ র ( নিহত) ছোট ছেলে এদিক সেদিক ছুটাছুটি দৌড়া দৌড়ি করতেছে ও চিৎকার করতেছে বলে আমার মা’ রে জানে মারছে। তখন আমি আমার গেইটে বাইরে যাইও না ভিতরে আছি বিশনাথ সাঁওতাল আমারে দেখে গেইটের কাছে এসে হাতের কোদাল দিয়া ১ম বার কোপ দেই আমি সরে দাঁড়ায় ২য় বার কোপ দেয় তখন আমার বাম পাঁয়ে হাটুর কাছে কোপ লাগে আমি রক্তাক্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকি। আর আশেপাশে শিশু বাচ্ছা যাকে পাচ্ছে তাকেই কোদাল দিয়া কোপ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে। ফলে আশপাশের মানুষ শিশু বাচ্ছারা দৌড়ে পালিয়ে যাই। আমার চিৎকার শুনে আমার ছেলে সজীব নুনিয়া আসলে আমার কোপ দেওয়ার জায়গা ধরে রাখে ও সরিয়ে দেয় তারপর আমি আমার ছোট ভাইয়ের ঘরে দৌড়ে গিয়ে উঠানে পড়ে যাই। পরে আমার ভাই আশপাশের লোক পরিবারজন চা বাগানে হাসপাতালে নিয়া প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়ে বাড়িতে চলে আসি। আমি বাড়িতে আসার পর শুনি আমার বাড়িতে অতিথি আসছে তাদের উপর আক্রমণ করতে আসলে তারা দরজা লাগিয়ে দেওয়াই আঘাত করতে পারে নি কিন্ত আমার পল্লী বিদ্যুৎ এর মিটার এর উপর আঘাত করে ও টাটা ডিস এন্টিনার ভেঙ্গে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকজন মিটারের সাথে তার জোড়া লাগিয়ে দিয়ে যাই। আহত রামদুলারী নুনিয়া বলেন আমরা বাড়ির পাশের লোক তাই চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়েছি। যদি এ রকম দূর্ঘটনা হয় তাহলে কেউ ঝগড়া লাগলে এগিয়ে যাবে না তখন কি হবে? আজকে সে ( বিশনাথ সাওতাল) করছে কালকে আরও কেউ করবে। এ রকম ঘটনা শুধু আজকে না বিগত ১০ বছর ধরে এ রকম অপরাধ করে আসছে যা আমরা পাড়া প্রতিবেশী, এলাকাবাসী, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি ও ইউপি সদস্য, তাদের নিজ সাওতাল জাতিগোষ্ঠী প্রধানদের নিয়েও বিচার ব্যবস্থা করি যাতে ভবিষ্যতে আর এ রকম না করে কিন্ত আজকে পুনঃরায় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটিয়ে দিল।
তাই আমি আদালত প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এর মাধ্যমে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ড দাবী জানাচ্ছি। যাতে আর কেউও এরকম দূর্ঘটনা করার সাহস না পাই।
আহত সজীব নুনিয়া-২২( পিতা রামকিষোণ নুনিয়া) বলেন আমি চিৎকার শুনে বাইরে বের হয়ে আসলে আমার মা’র উপর আঘাত করে তখন আমি আটক করতে গেলে বিশনাথ সাঁওতাল কোদাল দিয়া কোপ দিলে আমার ডান হাতের কনুই আঘাত লাগে। তারপরও তার বউ( স্ত্রী) ও ছেলে বাবই সাঁওতাল হাতে লাঠি ধারালো দা এবং মেয়ের হাতে লাঠি নিয়ে আসে। তার ছেলে ও বাবা আমাকে ধারালো দা দিয়ে আমার বাম হাতে কাধে কোপ দেই যা সজীব নুনিয়ার কাধ বরাবর কোপ দেওয়ার দাগ স্পট পাওয়া গেছে। আহত সজীব নুনিয়া বলেন আমি বিশনাথ সাঁওতাল ও তার ছেলের তদন্তপূর্বক আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা ও উপযুক্ত শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ডের আবেদন করছি।
তারামনি কালিন্দি ( নিহত নারী স্বামীর বড় ভাবী) বলেন আজকে আমার দেবড়ের বউরে মার্ডার করছে কালকে আরেকজনকে করবে। তাই আইনের মাধ্যমে চাই তার সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ড হাত জোর দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে ০৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন ০৪,০৫,০৬ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মহিলা সদস্যা সন্তকিয়া রায় বলেন আমি শুনার পর দৌড়ে এসে দেখি তাদের করুণ অবস্থা তখন সাথে সাথে আমি আমার চা বাগান হাসপাতালের চিকিৎসককে ফোন করি রামদুলারী নুনিয়া ও সজীব নুনিয়া কে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করি। লক্ষী কালিন্দিকে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলি। লক্ষী কালিন্দি, রামদুলারী নুনিয়া ও সজীব নুনিয়া কে কোদাল, ধারালো দা ও লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরও তারা দমে যায় নি। যে কাউকে আঘাত করার জন্য প্রস্তুত ছিল ফলে বাগানবাসীর সহায়তার সাহায্যে তাদের নাট মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়ে যাই। সেখানে পুলিশ প্রশাসন লোক,বাগান কর্তৃপক্ষ, বাগান পঞ্চায়েত কমিটি, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে তাদের পরিবারে চারজন( বিশনাথ,জয়মনি,বাবই,লক্ষী সাঁওতাল) শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ প্রশাসন এর কাছে সোপর্দ করি।
আজকে চা বাগানে বিচার ব্যবস্থা ও উপযুক্ত আইন ব্যবহার করা হয় না বলে এ রকম ঘটনা দিন দিন ঘটে যাচ্ছে। আমি প্রশাসন নিকট উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা জোর দাবী জানাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মোঃ লিটন আহমেদ বলেন আমি ইফতারের পরপর