প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:৩৭:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
চলতি অর্থ বছরের সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে বেসরকারি টেলিভিশন ও পত্রিকার প্রায় ১৮ জন সাংবাদিককে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদের বিরুদ্ধে। তবে একজন সাংবাদিককে উপঢৌকন দিতে চাইলে তিনি প্রত্যাখান করেন। ভবিষ্যতের জন্য পাউবো কর্মকর্তাকে সাবধান হওয়ার কথা বলেন ওই সাংবাদিক। শনিবার রাত ৮ টা থেকে ১০ ঘটিকা পর্যন্ত পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বসেই উপঢৌকনের টাকা বিতরণ করেন । এসময় প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তাসহ উপকৌটনের টাকা পাওয়া একজন সাংবাদিক।
জানা যায়, চলতি বছর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম, এতে করে বিপাকে পয়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, এছাড়া গেল ১১ ফেব্রুয়ারি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অনিয়মের জন্য শাল্লা উপজেলার ইউএনওসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পিআইসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে বসে হাওর বাঁচাও আন্দোলন এবং ঘটনাটি খুব আলোড়ন সৃষ্টি করায় সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। তারই প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আর সংবাদ প্রকাশ না করতে সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে নিজের করে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী। বিভিন্ন উপজেলায় সাংবাদিকদের পিআইসিও উপহার দেওয়া হয়েছে।
এই দুর্নীতি ঢাকতে গত শনিবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার একটি ফসলরক্ষা বাধে সাংবাদিকদের নিয়ে যান পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদের নিয়ে বাঁধ ঘুরে দেখে তারা পজেটিভ সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন। ঘটনাস্থলে একজন সাংবাদিককে উপঢৌকনের তালিকায় নাম উঠাতে অনুরোধ করেন পাউবো কর্মকর্তা। তখন তিনি প্রত্যাখান করেন।
দৈনিক কালের কণ্ঠ ও একাত্তর টিভির সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শামস শামীমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে পরিদর্শনে আমাকেসহ কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে গিয়েছিলেন পাউবোর কর্তারা। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনুরোধ করেন পজেটিভ নিউজ করার জন্য এবং উপঢৌকনের তালিকায় আমার নাম রাখার প্রস্তাব করেন। আমি সাথে সাথে তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করি এবং তার হোয়াটসএপ নম্বরে বিকেল পোনে ৫টায় ঘটনাস্থল থেকেই আমাকে তালিকায় না রাখার জন্য স্পষ্ট লিখে দেই। কয়েকজন সাংবাদিককেও সতর্ক করি যাতে আমাকে তালিকায় না রাখেন। পরে শুনেছি যারা গিয়েছিলেন। বেশিরভাগই ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে এসেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামছুদ্দোহা বলেন, হ্যা সাংবাদিকরা এসেছিলেন আমাদের অফিসে তবে আমার রুমে কেউ আসেনি এবং তারা উপর ২য় তলায় গিয়েছে কিন্তু কেন কি কারণে গিয়েছে সেটা জানি না।
এদিকে এ ঘটনার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি পরবর্তীতে তার ব্যবহার করা সরকারি নাম্বারটি বন্ধ করে দেন, এছাড়া তার বাসভবন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস সেখানে গেলেও তিনি সাংবাদিক আসার খবর পেলে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারব এরকম কাজ করে থাকলে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং সে সরকারি ফোন নাম্বার চাইলেই বন্ধ করে রাখতে পারবে না সেটির অধিকার আমাদের কারোর নেই এটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদিকে সাংবাদিককে টাকা দেওয়া হচ্ছে এই খবর পেয়ে আরো কিছু সাংবাদিক পাউবো অফিসে গিয়ে ভিড় করেন। তারা উপঢৌকন তালিকা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।