প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৩ , ১২:৩৪:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
শেখ নাসির আহমেদ, গাইবান্ধা থেকেঃ
গাইবান্ধায় নারী সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন হস্ত ও কুটির শিল্পের একটি কারখানা।
তার গড়া প্রতিষ্ঠানের নাম “নিরাশা দুরীকরণ আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা মধ্য ধানঘড়া (Disappoinment Socio -Economic Development Organization, DSDO), যা গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধ্য ধানঘড়া গ্রামে অবস্থিত। সাবিনা ইসমিন একসময় এনজিওতে কাজ করতেন। সে সময় নারীদের দু:খ দুর্দশা দেখে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করার চিন্তা করেন। এ-উপলক্ষ্যে তিনি যুব উন্নয়ন, রিপ-২ প্রকল্প, এসডিও, ব্লক বাটিক, ও বিসিক থেকে হস্ত ও কুটির শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে ঠাকুরগাঁও এ একটি পাপস কারখানা দেখে অনুপ্রানিত হয়ে বিসিক ক্ষুদ্র কুটির শিল্প থেকে অনুমোদন নিয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তনে ক্ষুদ্র পরিসরে মাত্র ৪টি মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়া পান তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির খবর ছড়িয়ে পরতেই বিভিন্ন শ্রেনির নারী ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীরা দলে দলে এসে যুক্ত হতে থাকেন প্রশিক্ষণে। মাত্র ১৫ দিনের প্রশিক্ষণেই এখন অসহায়-দুস্থ নারীরা খুঁজে পাচ্ছে উপার্জনের বৈধ পথ। প্রশিক্ষণ শেষে এখানেই তাদের কর্মের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তার এই পাপস কারখানায় এখন ৭জন কর্মকর্তার অধিনে ২২৫ জন নারী কর্মীর পরিশ্রমে ১৯টি প্রডাক্ট তৈরী হচ্ছে। এবং এই প্রডাক্টগুলো নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। সাবিনা ইয়াসমিন এভাবেই হয়ে ওঠেন মাঠ কর্মী থেকে নির্বাহী পরিচালক। এব্যাপারে নারী শ্রমিক হালিমা বেগম বলেন সংসারের কাজ কর্মের ফাঁকে ফাঁকে DSDOতে কাজ শিখে এখন এখন নিজে অর্থ উপার্জন করছি। এতে আমি ও আমার পরিবারের সবাই খুশি।
আফরিন জান্নাত বলেন, লেখা পড়ার পাশাপাশি মেয়েরা এখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারবে সেই সাথে সংসাসারেরও আর্থিক উন্নতি ঘটাতে পারবে।
শাহানা বেগম বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। খুব কষ্টে জীবন যাপন করতাম। DSDOতে কাজ করে এখন আমি বেশ অর্থ উপার্জন করতে পারছি। পাপস কারখানাটা আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ। প্রডাকশন অফিসার পায়েল রানা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৯ টি প্রডাক্ট তৈরী হচ্ছে, এগুলো নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাইকারী বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো: শামীম হোসেন বলেন, আমাদের নির্বাহী পরিচালক (সাবিনা ইয়াসমিন) নারীদের স্বাবলম্বী করতে অনেক কষ্টে তিল তিল করে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। আশাকরি সবার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি সে লক্ষ পূরনে স্বার্থক হবে। নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমি এনজিওতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে অবহেলিত নারী সমাজের দু:খ দুর্দশাগুলো খুব কাছে থেকে দেখেছি। এজন্যই নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে হস্ত ও কুটিরশিল্পের এই কারখানাটি গড়ে তুলেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প সময়ে সারাদেশে এর প্রসার ঘটানোর ইচ্ছা আছে।
সরকারী সুযোগ সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অবহেলিত নারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে ব্যাপক আর্ত্ন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি এবং সেই সাথে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে দাবী করেন নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন।