প্রতিনিধি ১৭ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:১৭:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ আঃ রহিম জয়, মানবাধিকার কর্মী
অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে দুর্গাপুর মানুষের জনজীবন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের যে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপুর উপজেলা এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও এলাকাভিত্তিক ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তা ছাড়া যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে তার সাথেও লোডশেডিংয়ের কোনো মিল থাকছে না। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎহীন পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও।
জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বলা হয়েছিল ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কিছু দিনের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তা দুই ঘণ্টা করে করা হতে পারে বলে চিন্তা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এ দিকে গ্রাহকদের সুবিধার জন্য কোন এলাকায় কোন সময় লোডশেডিং হবে তার তালিকা প্রকাশ করতে থাকে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গ্রাহকদের সুবিধার্থে লোডশেডিং রাত ১১টার আগে দেয়ারও চিন্তা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ঘটতে থাকে তার উল্টো।
হাসিবুল স্টরে কর্ণধার রফিকুল ইসলাম
বলেন, লোডশেডিং এর আগেও হয়েছে। তবে সে সময় বাস্তবতার সাথে মিল রেখে অনেকেই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে উচ্চমূল্যে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর ফলে কয়েক গুণ বেশি বিল নিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি তার ঠিক উল্টো। তারপরও বাস্তবতা মেনে নিয়ে অনেকেই এক-দুই ঘণ্টার লোডশেডিং মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা একেবারে যাচ্ছেতাই। তিনি বলেন, গত শনিবার তার এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে পাঁচবার। এর মধ্যে একবার দেড় ঘণ্টা ও দুইবার হয়েছে এক ঘণ্টা করে। বাকি দুইবার হয়েছে ৩০ মিনিট ও ১৫ মিনিট করে। সব থেকে সমস্যা হচ্ছে এই গরমে যখন রাত পৌনে ১টা এবং ভোর পৌনে ৩ টায় বিদ্যুৎ চলে যায় তখন কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারে?
একই এলাকার আলেয়া বেগম বলেন, শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে একবার বিদ্যুৎ চলে যায়। চার বছর ও এক বছর বয়সী দু’টি সন্তান নিয়ে হাতপাখা দিয়ে কোনোরকম পার করে দেন এক ঘণ্টা। এরপর দুপুরে খাবার পরে ৪টার দিকে বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে ঠিক তখন আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। দু’টি সন্তানই গরমে কান্না শুরু করে। নিজেও ঘেমে ভিজে যাচ্ছিলেন। কিভাবে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। সন্ধ্যার সময় স্বামীও অফিস থেকে বাসায় ফেরেন। রাত ১২টার দিকে তারা ঘুমোতে যান। ছোট সন্তান ঘুমিয়ে গেলে বড়জন জেগে ছিল। রাত সোয়া ১টার সময় আবার লোডশেডিং। এবার অফিসফেরত স্বামী না ঘুমিয়ে হাতপাখা দিয়ে বাচ্চাদের বাতাস করতে থাকেন। সোয়া ২টার দিকে বিদ্যুৎ এলে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। ভোর পৌনে ৪ টায় আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। এবারো গরমে কান্না শুরু করে উঠে যায় বাচ্চারা। বেচারা বাবা আবারো হাতপাখা ঘুরাতে থাকেন। সকাল ৬টার দিকে যখন বিদ্যুৎ আসে ততক্ষণে না ঘুমিয়ে তীব্র মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাচ্চাদের বাবা আসলাম রহমান। এভাবে চলতে থাকলে শিশু নয়, পরিবারের অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আলেয়া বেগম আরো বলেন, মানুষ যখন একটি জিনিসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে সেখান থেকে ফেরাতে গেলে বিপত্তি ঘটে ।পোরসভার বাসিন্দা হামিম উল কবির জানান, তার এলাকায় তিন ঘণ্টা লোডশেডিং বাধ্যতামূলক থাকেই। এর বাইরেও প্রতিদিন ৩০ মিনিট ২০ মিনিট করে যায় আরো কয়েকবার। দুর্গাপুর উপজেলা বাসিন্দা মাহমুদ আহম বলেন, ইফতার তারাবির নামাজ ও সেহরি সময় বিদ্যুৎ থাকে না জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।দুর্গাপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসীনতায় মানুষ এখন দিশাহারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছে দেশ তখন কিছু দুষ্কৃতী লোক উদাসীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ কে নেবে দায়িত্ব।
মানিক মিয়া নামে আরেকজন অভিযোগ করেন লোডশেডিং হয় টাইম দিনের বেলা ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল। এরপর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে ঠিক তখন পৌনে ৪টার দিকে চলে যায় বিদ্যুৎ। সাথে সাথে সাড়ে ৪ বছরের ছেলে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে। তাকে হাতপাখার বাতাস দিয়ে শান্ত করলেও না ঘুমিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মাহমুদ প্রশ্ন করেন, লোডশেডিং কি সামনে আরো বাড়বে, না এভাবেই থাকবে।উপজেলা থেকে নজিরবিহীন লোডশেডিং অফিস থেকে মুহাম্মদ হানিফ ভূঁইয়া জানান, নজিরবিহীন লোডশেডিং চলছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে একবার দিচ্ছে আর নিচ্ছে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মাননীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মনছুর রহমান মহাদয় দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন দুর্গাপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজি মহোদয়
আপনাদের কাছে আকুল আবেদন এই লোডশেডিং থেকে জনগণ এটা প্রতিকার চায়, জনজীবন দুর্ভিক্ষ উঠেছে
জনগণ। এই লোডশেডিং আর চায় না জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাই আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আপনাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি