প্রতিনিধি ২৮ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:৪৬:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
পলাশ সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি :-
‘জন্ডিস রোগীরা প্রথমেই যেটা বলে, হালকা জ্বর থাকে, খেতে পারে না, বমি হয়। এটা দিয়েই জন্ডিসটা শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে আস্তে আস্তে প্রশ্রাব হলুদ হয়। তারপরে চোখ হলুদ হয়।’
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জন্ডিস নতুন কোনো রোগ নয়। এ রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জন্ডিসের লক্ষণ বা উপসর্গ এবং এ রোগ শনাক্তে প্রয়োজনীয় টেস্ট বা পরীক্ষাগুলো নিযে এক ভিডিওতে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসাইন মোহাম্মদ শাহেদ। তথ্যগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো পাঠকদের সামনে।
জন্ডিসের লক্ষণ বা উপসর্গ
১. জন্ডিস রোগীরা প্রথমেই যেটা বলে, হালকা জ্বর থাকে, খেতে পারে না, বমি হয়। এটা দিয়েই জন্ডিসটা শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে আস্তে আস্তে প্রশ্রাব হলুদ হয়। তারপরে চোখ হলুদ হয়। একসময় দেখা যায় যে, প্যাশেন্টের জ্বরটা কমে যায়, বমিও কমে যায়, কিন্তু খেতে পারে না; গন্ধ লাগে এবং চোখ হলুদ, প্রশ্রাব হলুদ হয়ে যায়।
২. অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রোগীর চুলকানি হয়। এটা বিশেষ করে যখন জন্ডিসটা অনেক দিন থাকে, তখন শরীর চুলকায়।
সাধারণত একজন মানুষের জন্ডিসের এ উপসর্গগুলো চার থেকে ছয় সপ্তাহ নাগাদ থাকতে পারে। সাধারণত চার সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নরমাল জন্ডিসগুলো ভালো হয়ে যায়, কিন্তু যদি দেখা যায় জন্ডিস চার সপ্তাহ পার হয়ে গেছে বা ছয় সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, তখন নরমাল জন্ডিস না, অন্য কোনো কারণে জন্ডিস বা খারাপ কোনো কারণে জন্ডিস হয়েছে মনে করা হয়। যেমন: স্টোন, টিউমার বা অন্য খারাপ কোনো কারণে জন্ডিস হয়েছে কি না, তখন আমরা ধারণা করি।
এ জন্য কারও জন্ডিস হওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে আপনারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন। কারণ যে জন্ডিস চার সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, এটা নরমাল জন্ডিস না; এটা সাধারণত সেকেন্ডারি বা খারাপ কোনো কারণে জন্ডিস। জন্ডিসের টেস্ট বা পরীক্ষা
১. একটা রোগী যখন আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা জন্ডিসের কিছু টেস্ট দিই। প্রাথমিকভাবে, মানে জন্ডিস হইছে কি না বা কতদূর এটা, এ জন্য সাধারণত সিরাম বিলিরুবিন টেস্ট করা হয়। এটার মাত্রা সাধারণত ওয়ান পয়েন্ট ওয়ান পর্যন্ত হয়ে থাকে। যখন এর মাত্রা ওয়ান পয়েন্ট ওয়ানের বেশি থাকে, তখন এটাকে আমরা জন্ডিস হিসেবে শনাক্ত করি।
২. বিলিরুবিনের সঙ্গে সাধারণত কিছু এনজাইম বেড়ে যায়। কিছু এনজাইম বেড়ে গেলে ধরা হয় লিভারের কারণে জন্ডিস। অন্যদিকে অ্যালক্যালাইন ফসফেটাস বেড়ে গেলে ধরে নিই কোনো ওষুধের কারণে জন্ডিস হইছে অথবা টিউবের ভেতরে কোনো রোগের কারণে জন্ডিসটা হইছে।
৩. জন্ডিস শনাক্ত করার পরে কী কারণে জন্ডিস হইছে, এটা ধরার জন্য কিছু টেস্ট করি। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো করা হয়। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, বি ভাইরাস, সি ভাইরাস, ই ভাইরাস। এগুলো করা হয়। এগুলো করে আমরা কোনো ভাইরাস থেকে জন্ডিস হইছে কি না, সেগুলো শনাক্ত করি।
৩. যদি দেখা যায়, কোনো ভাইরাস নাই, তখন আমরা অন্য কোনো কারণ আছে কি না, দেখি। এর মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। আলট্রাসনো করে লিভারের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কি না, যেমন: লিভারের টিউবের ভেতরে কোনো টিউমার বা স্টোন এগুলো আছে কি না, শনাক্ত করা হয়।
৪. অনেক সময় দেখা যায় যে, কারও কারও জন্ডিস অনেক দিন ধরে থাকে। একবার হয়, একবার ভালো হয়। এটার জন্য ক্যালোরি ডিপ্রাইভেশন টেস্ট করা হয়।
৫. আবার অনেকের দেখা যায় যে, ঘন ঘন জন্ডিস হয়। তখন আমরা ব্লাড টেস্ট করি, সিবিসি করে দেখি। সাথে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থাকে।
৬. সাধারণত রক্তের কারণেই জন্ডিসটা হয়। তখন হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস করা হয়। এটা করে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া আছে কি না, এটা ধরা হয়। অনেক সময় হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া, এগুলোর কারণে জন্ডিস থাকে।
৭. অনেক সময় কোনো ওষুধ বা ড্রাগের কারণে জন্ডিস হইছে কি না, এইটা ধরার জন্য গামা-জিটি একটা টেস্ট আছে, এটা করা হয়। এগুলো আমরা রোগীর অবস্থা বুঝে বিভিন্ন সময় যখন যে টেস্টটা লাগে, এটা করি। করে কী কারণে জন্ডিস হইছে, এটা আইডেন্টিফাই করা হয়।
৮. যদি আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যায় যে, লিভারের টিউবের ভেতরে জন্ডিস, তখন আমরা এমআরসিপি নামে একটা পরীক্ষা করি। এটা করে পাথর বা টিউমার কোন পজিশনে আছে, এটা আইডেন্টিফাই করি।