• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • নাগরিক সংবাদ

    জালে উটেছে নিষিদ্ধ সাকার ফিস

      প্রতিনিধি ২৯ মে ২০২৩ , ১:৩৩:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো: রতন সরকার, স্টাফ রিপোর্টার

    গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শীতলক্ষ্যা, সুতিয়া, খিরু ও মাটিকাটা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ মাছ সাকার। জেলেদের যেকোনো মাছ শিকারের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠছে সাকার মাছ। এমনকি এই মাছ ছড়িয়ে পড়ছে খাল বিল পুকুর ডোবায়। ফলে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছের পরিমাণ বহুগুণ কমেছে বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

    এদিকে নিষিদ্ধ সাকার মাছ নদ-নদী থেকে ধ্বংস করা বা এ থেকে মুক্তি পাওয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়নি মৎস্য বিভাগ। নদ-নদী থেকে খাল বিল এমনকি বর্তমানে বাড়ির পাশের পুকুরেও এই মাছ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। জীব বৈচিত্র্যের জন্য যথেষ্ট হুমকির নিষিদ্ধ সাকার ফিশ। এই মাছ দমনের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।

    সরেজমিন ঘুরে শীতলক্ষ্যা সুতিয়া খিরু এবং মাটিকাটা নদী ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর পূর্বে মাঝে মধ্যে দু-একটি সাকার ফিশ নামক নিষিদ্ধ মাছ ধরা পড়ত বড় নদীগুলোতে। কিন্তু সম্প্রতি এক বছর থেকে যেকোনো জালে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে সাকার ফিশ। তার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ অল্প পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো জাল ফেলা হলে অন্য মাছ না ধরা পড়লেও সাকার ফিশ ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে।

    নান্দিয়া সাঙ্গুন জেলে পাড়ার জেলে রাখাল বর্মন জানান, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে থেকেই দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ কমেছে বহুগুণ। আগে জাল ফেলা হলেই প্রচুর পরিমাণ দেশীয় মাছ উঠত। সম্প্রতি বছরগুলোতে তাঁদের বড় সমস্যা এই নিষিদ্ধ মাছ। নদীতে জাল ফেলা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে এই মাছ।

    মাদব বর্মন নামে আরেক জেলে বলেন, ‘আগে নৌকা আর জাল হলেই আমাদের সংসার ভালো চলত। কিন্তু সম্প্রতি অন্য পেশায় যেতে হয়। অনেক জেলে এরই মধ্যে পেশা বদলে ফেলেছে। কি আর করার, নদীতে মাছ নেই, অনেকেই নদী থেকে জাল ফেলে শামুক কুড়িয়ে এনে তা বিক্রি করে জীবিকা চালায়। শিল্প কারখানার বর্জ্যের কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। যার কারণে নদীগুলোতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। তবে সম্প্রতি একটি কাঁটাওয়ালা মাছের দেখা মিলছে প্রচুর। মানুষ মুখে মুখে বলছে এটি সাকার ফিশ। এই মাছ নদীতে আসার পরপরই দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ কমে গেছে। নদীগুলো এই মাছে ভরে গেছে। জাল ফেললেই এই মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে।’

    কাওরাইদ গ্রামের স্কুলশিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ‘নিষিদ্ধ এই মাছ এরই মধ্যে নদীগুলোর দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ গিলে খেয়েছে। এরপর আশপাশের খাল বিল ডোবা, এখন চলে এসেছে পুকুরে। আশ্চর্যের বিষয় হলো মৎস্য বিভাগ নিষিদ্ধ সাকার ফিশের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নদ-নদীগুলোতে যেভাবে নিষিদ্ধ সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়ছে। খাল বিল ডোবা আর পুকুরে এভাবে ছড়িয়ে পড়লে আমাদের খুবই ক্ষতি হবে। এটা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো।’

    বরমী এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মাজাহার হোসেন বলেন, ‘নিষিদ্ধ সাকার ফিশ তো এখন আমাদের মৎস্য খামারে মিশে গেছে। এরা এতটাই ক্ষতিকারক যে মাছের পোনা খেয়ে সকল মাছ দমন করে ফেলতে পারে। আমরা যত দূর জানতে পারছি এরা (সাকার ফিশ) অনেক কম অক্সিজেনে দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারে তাই এদের সহজে নিধন করা সম্ভব নয়। নদীর পাড়ে অথবা পুকুর পাড়ে একদিন ফেলে রাখলেও এ জাতীয় মাছ বেঁচে থাকে। এরা খুবই শক্তিশালী। তাই মৎস্য বিভাগের দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

    শ্রীপুর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাকার ফিশ শুধু আজ নদ-নদীতে সীমাবদ্ধ নয়। আজ নিষিদ্ধ সাকার ফিশ খাল বিল ডোবা নালা পুকুরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটিকে নিধনের জন্য মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়ে কাজ করছে। নিষিদ্ধ এই মাছটি যে খানে পাওয়া যাবে সেখানেই মেরে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাছটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি নিধন করতে সময় লাগবে।’

    এই মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিষিদ্ধ সাকার ফিশ নদ নদী খাল বিলে থাকা অনন্য মাছের ডিম খেয়ে মাছের বংশবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই নিষিদ্ধ সাকার ফিশ দমনে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।’

    আরও খবর

    Sponsered content