প্রতিনিধি ৫ জুলাই ২০২৩ , ১:৪৮:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল( সিওমেক)স্টাফনার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১৩ বছর বয়সী নির্যাতিতা ওই গৃহকর্মীর নাম মোছা.জান্নাত আক্তর। বিভিন্ন অপবাদসহ ভাত বেশী খাওয়ার অভিযোগে জান্নাতের সমস্ত শরীরে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা ও মারধর করে নির্যাতন করেছে (সিওমেক) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত ওই নার্স। এঘটনায় গৃহকর্মী জান্নাত’র পাশে দাড়িছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। নির্যাতিতা গৃহকর্মী জান্নাত (১৩) বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার অন্যতম আসামী নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার কর্মস্থল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী জান্নাতের বাবা গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ছৈলাখেল নবম খন্ড এলাকার মো. জাকির হোসেন খান বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় সোমবার (৩ জুলাই) রাতে শাহনাজ আক্তার সাবিহা(৩৬) কে প্রধান আসামী করেেআরো ২ জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন,গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ছৈলাখেল ৮ম খন্ড গ্রামের দুলু মেম্বারের মেয়ে শাহনাজ আক্তার সাবিহা (৩৬) সাবিহার স্বামী পলাশ মিয়া(৩৮) ছোট বোন রেহেনা আক্তার রুমি(২৪)
মামলা সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতের বাবা মো. জাকির হোসেন খানের বাড়ি, নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার বাবার বাড়ি গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার একই গ্রামে। সেই সুবাদে জাকির খান’র মেয়ে জান্নাতকে শাহনাজ তার বাসায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে মাসিক ১৫০০ টাকা বেতনে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজে নেন।
কিন্তু ওই বাসায় যাওয়ার পর থেকেই জান্নাতের উপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন। ভাত বেশি খাওয়াসহ বিভিন্ন অপবাদ-অজুহাতে জান্নাতকে শাহনাজ ও তার স্বামী পলাশ মিয়া (৩৮) ছোট বোন রেহেনা আক্তার রুমি (২৪) প্রায়ই বেধড়ক মারধর করতেন। এমনকি রান্নার কাজে ব্যবহৃত স্টিলের খুন্তি আগুনে গরম করে জান্নাতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দিয়েও নির্যাতন করতেন তারা। কিন্তু এসব বিষয় পরিবারকে জানালে জান্নাতকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন নার্স শাহনাজ। তাই এতদিন জান্নাত মুখ খোলেনি।
নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ দেড় বছরে একবারও জান্নাতকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি শাহনাজ। এবার ঈদউল আযহার ছুটি পেয়ে গৃহকর্মী জান্নাত কে সঙ্গে নিয়ে শাহনাজ তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যায়।কিন্তু জান্নাত সেই সুযোগে তাদের বাড়িতে গেলে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পরিবারের লোকজনের চোখে পড়ে। এসময় তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলে জান্নাত তার ওপর চলা নির্যাতনের কথা খুলে বলে।
অভিযোগের বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) মহাসচিব সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা মো.ইসরাইল আলী সাদেক’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়,নার্স শাহনাজের বাসায় কী ঘটনা ঘটেছে তা আমি জানি না। তবে গত সোমবার থেকে তিনি হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন-কতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন,জান্নাত(১৩) নামের এক কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের সত্যতা প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। তার শরীরে বেশ কিছু স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে হাসাপতালে চিকিৎসাধীন। শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা রুজুর পর থেকে অভিযুক্তদের খুঁজছে পুলিশ। তারা পলাতক রয়েছেন।গৃহকর্মী জান্নাত আক্তার নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ওদৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী