• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • চট্টগ্রাম

    ফসলের জমির ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি হ’ল পার্চিং পদ্ধতি

      প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৪২:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    এম. জুলফিকার আলী ভুট্টো, বিশেষ প্রতিনিধি-

    ফসলের ক্ষেতে বা মাঠে ডাল বা কঞ্চি ইত্যাদি পুঁতে দেওয়া। কীটনাশক ছাড়া ডাল বা কুঞ্চি স্থাপন করে ফসলের জমির ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার পদ্ধতিটির নাম পার্চিং পদ্ধতি। জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাকেই পার্চিং বলা হয়। পার্চিং পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব এবং লাভজনক।

    খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় আমন ধান রোপন করার পরপরই কৃষকরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণ এর মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার ও ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা এবং পোকার বংশ বিস্তার কমানো যায়। এই পদ্ধতির আরও একটি সুবিধা হ’ল পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

    পার্চিং পদ্ধতিটি খুবই মজার, বিশেষত পাখিদের জন্য। কারণ পার্চিংয়ে বসে দোল খেতে খেতে পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপা পোকার মথ, শীষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুঁড় লেদা পোকা, শুঁড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুঁড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা ধরে খায়। সাধারণত দেখা যায়, জমিতে সার দেওয়ার পর থেকেই রোপা-আমন, ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে বাদামি ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা এবং চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এত দিন কৃষকরা এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কীটনাশকসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছিলেন। সু-খবরটি হচ্ছে, পোকা দমনে প্রাকৃতিক পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।

    এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোতা ডালগুলোর ওপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার ফলে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষকরা জমিতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও পরিবেশ বান্ধব পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

    সব ধরনের পাখি পার্চিংয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। এক গবেষণায় জানা যায়, একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম ও পুত্তলি খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে হাজার হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে। সাধারণত বন্ধু পোকামাকড়গুলো খাবার সংগ্রহের জন্য বেশি নড়াচড়া ও চলাফেরা করে।

    অপরদিকে ক্ষতিকর পোকামাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে বা কুড়ে কুড়ে খায়। পাখিরা যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকামাকড়গুলো দেখতে পায় এবং ধরতে পারে সে জন্যই একটু ঘন ঘন পার্চিং দেওয়া হয়। কৃষি বান্ধব এ প্রযুক্তি ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রোপা ক্ষেত রক্ষায় কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমন ক্ষেতের পোকা দমনের পার্চিং পদ্ধতি। পার্চিং পদ্ধতি ফসলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

    পার্চিং পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব এবং লাভজনক, পার্চিং এর মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায় ও ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা এবং পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। তাই সকল কৃষক-কৃষাণীদের নিজেদের জমিতে রোপনের পরপরই পার্চিং করা যেতে পারে।

    খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার, উমা প্রসাদ বড়ুয়া জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রচার-প্রচারণা এবং সরাসরি কৃষক ভাইদের দোরগোড়ায় গিয়ে পরামর্শ প্রদানের ফলে কৃষক ভাইয়েরা ধান ক্ষেতে ‘পার্চিং’ স্থাপনের উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। ব্লকের এমন কোন ধানের মাঠ পাওয়া যাবে না যেখানে ‘পার্চিং’ স্থাপন হয় নি। তিনি কৃষক ভাইদের নিকট এ ‘পার্চিং’ প্রযুক্তি সাসটেইনেবল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    আরও খবর

    Sponsered content