• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • রাজশাহী

    তানোরে সিন্ডিকেট চক্রের কাছে অসহায় কৃষকরা প্রতিদিন কমছে ধানের দাম

      প্রতিনিধি ২২ নভেম্বর ২০২৩ , ১:৩২:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    তানোর প্রতিনিধি:

    দিনের দিন কমতেই আছে ধানের দাম, গত সপ্তাহে একমন ধানের দাম ছিল ১ হাজার ১৮০-৯০ টাকা। সেই ধানের দাম সিন্ডিকেটে ১০৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষকরা। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারনে ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা ইচ্ছেমত দাম কমিয়েই চলেছেন। এমন ভয়াবহ সিন্ডিকেটের কারনে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। শুধু ধানের সিন্ডিকেট না সার কীটনাশক সিন্ডিকেটেও অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করে সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি তুলেছেন উৎপাদন কারী কৃষকরা।

    জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় রোপা আমন ধান কাটা। প্রতিটি মাঠের ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে প্রায়। আবার অনেকে ধান কাটার পর জমিতে আলু রোপন শুরু করেছেন।
    কৃষক সারোয়ার হোসেন জানান, দুবিঘা জমির ধান মাড়াই করে ৩৭ মন ফলন হয়েছে। বিঘায় খরচ হয়েছে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে কাটা মাড়ায়ের জন্য ৪ মন করে ধান দিতে হয়েছে। সবকিছু বাদ দিয়ে বিঘায় ১৪ মন করে ধান হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য ১০৮০ টাকা করে। সেই হিসেবে ১৪ মন ধানের দাম আসে ১৫ হাজার ১২০ টাকা। তিনমাস পরিশ্রম করে সমান সমানে, শুধু খড়টাই লাভ। চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দাম ছিল ১১৭০ থেকে ১১৮০ টাকা মনে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি হলেও ধানের দাম কমতেই আছে, কোন ভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। এএক আজব সিন্ডিকেট। অথচ যে কোন জিনিসের দাম বেড়ে গেলে হইচই পড়ে যায়। কিন্তু ধানের দাম কমে যাচ্ছে কারো কোন গুরুত্ব নেই।
    নারায়নপুর গ্রামের কৃষক মইফুল জানান, ২০ বিঘা জমিতে বিঘার ২০ মন করে ফলন হয়েছে। আমি যখন বিক্রি করি সাড়ে ১১০০ টাকা দাম ছিল। সে হিসেবে খুব একটা লোকসান হয়নি। তবে বর্তমান ধানের বাজার কমে প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে ১০৭০ থেকে ১০৭৫ টাকায়। একই গ্রামের শরিফুল ৯ বিঘায় মাড়ায় করে ২০ মন করে ফলন পেয়েছেন ।তিনি জানান, দাম পেয়েছিলাম সাড়ে ১১০০ টাকার উপরে। তারা আরো বলেন আমাদের এলাকায় প্রায় কৃষকের ধান ২০ থেকে ২২ মন করে ফলন হয়েছে। যারা টেন্ডারে জমি করেছেন তাদের লোকসান ।
    পাঁচন্দর ইউপির কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, এবারে আমন ধানের ফলন বিঘায় ১৬ থেকে ১৮ মন করে হয়েছে। উৎপাদন খরচ উঠছে না। ধানের লোকসান মাথায় নিয়েই আলুর জমি তৈরি ও রোপন শুরু করেছি।
    বাধাইড় ইউপির উঁচাডাংগা এলাকার কৃষক দুরুল বলেন, আমাদের এলাকায় রোপা আমনের ফলন মারাত্মক বিপর্যয়। বিঘায় নিচু জমিতে ১৬ মন থেকে ১৭ মন ফলন হয়েছে। আর উঁচু জমিতে ১২ মন থেকে উর্ধ্বে ১৪ মন ফল হয়েছে। কাটা মাড়ায়ের জন্য বিঘায় ৪ মন করে দিতে হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাধাইড় ইউপি ও মুন্ডুমালা পৌর এলাকার উঁচু জমিতে প্রয়োজনের সময় সেচ পানি দিতে না পারার কারনে মারাত্মক ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। বিঘায় ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। আবার চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারনে দিনের দিন ধানের দাম কমতেই আছে।
    কৃষকরা জানান, দেশে শুধু মরন উৎপাদন কারী কৃষকের। যে কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করেছে দেশকে। অথচ সেই কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছে না। প্রতিদিন মনে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে কমছে। অথচ অন্য জিনিসের দাম বাড়তি হলে বাজারে চলে অভিযান ও জরিমানা। কিন্তু কৃষকের রক্ত ঘামের ফসল ধান উৎপাদন করে খরচ উঠছে না। কারা সিন্ডিকেট করছে, কারা কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম দিচ্ছেনা এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই, নেই কোন তদারকি। যেন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সবাই। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকরা বাকিতে চাষাবাদ করে থাকেন। ধান মাড়াইয়ের সাথে সাথে বিক্রি করে বাকি পরিশোধ করতে হয়। তানাহলে পরের আবাদ করা যাবেনা। আবার আলু রোপন করতে হবে। বিশেষ করে পটাশ সার পাওয়াই যাচ্ছে না। পেলেও বাড়তি দাম ছাড়া মিলছেনা।
    তাদের দাবি, নিয়োমিত বাজার মনিটরিং ও সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে লোকসান থেকে কিছুটা হলেও কৃষকরা রেহাই পাবেন। অতীতে হাটবারের দিন বিক্রি হত ধান। আর এখন পাড়া মহল্লায় ধানের আড়ৎ। বাড়ি থেকে ও খৈলান থেকে বিক্রি হচ্ছে ধান। কারন হাটে খাজনা দিতে হয় অনেক। তারপর তানোর পৌর এলাকার কালিগঞ্জ ও তালন্দ হাটবারে প্রচুর পরিমানে ধান কেনাবেচা হয়।
    উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, সবাই একসাথে ধান তুলছেন ও বিক্রি করছেন এজন্য দাম কমছে। তবে কিছুদিন সংরক্ষণ করে রাখলে দাম পাবে। সবাই যখন ফসল একসাথে উত্তোলন করে তখন কিছুটা দাম কমে যায়। আবার কয়েকদিন পর পুনরায় বেড়ে যায়। এবারে উপজেলায় ২১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। ফলন ভালো হয়েছে। তবে উঁচু জমিতে কিছুটা কম।

    আরও খবর

    Sponsered content