প্রতিনিধি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:৫৮:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহৎ ও ব্যস্ততম হল ঈদগাঁও বাজার। ঈদগড়-বাইশারী থেকে শুরু করে রশিদনগর, ভারুয়াখালী ও চৌফলদন্ডীসহ বৃহত্তর ঈদগাঁও অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের কেনাকাটার কেন্দ্রস্থল এ বাজার। প্রতিদিন মানুষের সমাগম থাকে। তবে বাজারের প্রবেশমুখেই ডিসি সড়কের উপর প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে ছাগলের হাট। হাট বসানোয় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, এতে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও রোগী সবাই চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ঈদগাঁও বাসস্টেশন থেকে বাজারে প্রবেশের মুখেই এই ছাগল বাজার বসানো হয়। মূল সড়কের দুই পাশে ছাগল রাখার কারণে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কয়েক মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে আধাঘণ্টারও বেশি। যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি রোগীবাহী যানবাহনও আটকে যাচ্ছে, যা অনেক সময় জীবন ঝুঁকি তৈরি করছে।
স্থানীয়রা জানান, ঈদগাঁও বাজার প্রাচীনকাল থেকেই একটি বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে এখানে মানুষের ভিড় বেড়েছে, বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা। বিশেষ করে কোরবানির সময় কিংবা শীত মৌসুমে ছাগলের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু বাজারে ছাগলের জন্য আলাদা কোনো হাটের জায়গা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ডিসি সড়কের উপরই বসানো হচ্ছে ছাগল বাজার। এতে দুই দিন বাজার এলাকার সড়ক কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
ব্যবসায়ীদের মতে, তাদের ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। দোকানের সামনে পুরো সড়ক ছাগলের হাটে ভরে যায়। এতে ক্রেতারা দোকানে আসতে পারেন না। ফলে বিক্রি অনেক কমে যায়। এই ক্ষতির দায় আমাদের কেন নিতে হবে? প্রশাসন যদি বিকল্প কোনো জায়গা নির্ধারণ করত, তাহলে এই সমস্যা হতো না।”
পথচারীরাও ক্ষুব্ধ। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হন। শিক্ষার্থীরা জানান, ছাগল বাজারের মধ্য দিয়েই তাদের যেতে হয়। ছাগলের মলমূত্রে রাস্তা নোংরা হয়ে থাকে, দুর্গন্ধ ছড়ায়, ফলে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে। এতে শুধু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না, স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।
যানবাহন চালকরা জানান, “বাজার কমিটির অব্যবস্থাপনা আর ছাগল বাজারের কারণে যানজট লেগেই থাকে। দুই মিনিটের পথ যেতে আধাঘণ্টা লাগে। সড়কের দুই পাশে ছাগল রাখা হয়, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে দরদাম করে, ফুটপাতও দখল হয়ে যায়। এতে আমাদের টমটম চালাতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনা ঘটে।”
ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির প্রচার সম্পাদক জানান, “এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। শুধু ছাগল বাজার নয়, বাজারের বিভিন্ন গলিতে টমটম, অটোরিকশা অব্যবস্থাপনায় দাঁড়িয়ে থাকে। ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়, সড়কে তরকারির হাট বসে। এসব কারণে বাজার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। ছাগল বাজার সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসন ও বাজার কমিটি মিলে সমাধান খুঁজে বের করুক।”
অন্যদিকে ছাগল বাজার ইজারাদার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বৈধভাবেই হাট বসাচ্ছেন। তাদের দাবি, প্রায় ৫০ বছর ধরে এই ডিসি সড়কে ছাগল বাজার বসছে। বাজারের ইজারা নিতে তারা প্রতি বছর বিপুল টাকা ব্যয় করেন। এবছরও ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। এক ইজারাদার বলেন, “আমরা বৈধভাবে টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। এখন প্রশাসন যদি বিকল্প জায়গা না দেয়, তাহলে আমরা এখানেই বসতে বাধ্য। আগে কোন সমস্যা হয়নি, এখন দোকানদাররা ফুটপাত দখল করে রেখেছে, তাই আমাদের রাস্তার পাশে নামতে হচ্ছে।
ঈদগাঁও ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতে, “ডিসি সড়কে ছাগল বাজার বসানো অনুচিত, তবে বহুবছর ধরে এভাবেই বসছে। বিকল্প জায়গা না থাকায় সমস্যা সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। তবুও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করব।
সাধারণ মানুষের মতে, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণে বছরের পর বছর এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাজারে সুনির্দিষ্টভাবে ছাগল হাট বসানোর জায়গা নির্ধারণ করলেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। সড়ক ও ফুটপাত জনগণের, সেখানে হাট বসানো আইনগতভাবেও ঠিক নয়। ছাগল বাজারকে বাজারের ভেতর কোন খালি জায়গায় সরিয়ে নেওয়া গেলে যানজট কমবে, পথচারী ও ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবেন।
সবমিলিয়ে ঈদগাঁও বাজারে ডিসি সড়ক দখল করে ছাগল হাট বসানো এখন জনজীবনের এক বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছে, রোগীরা বিপাকে পড়ছেন, পথচারীরা নাজেহাল হচ্ছেন। অথচ এই দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বাজার কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়রা বলছেন, জনদুর্ভোগের কথা ভেবে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা দরকার।

















