• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • অর্থনীতি

    কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অনিয়ম, বরাদ্দের টাকা হরিলুট

      প্রতিনিধি ১১ জুন ২০২৩ , ৩:৪৫:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ মোমিন ইসলাম সরকার দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় প্রতিনিধি :

    হাজারো অনিয়মের অভিযোগ আসছে মহিলা অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্প নিয়ে। কথা ছিলো সারাদেশের সাড়ে চারা লাখ কিশোর কিশোরী এসব ক্লাবে সংস্কৃতি চর্চা করবে।
    কিন্তু পঞ্চগড় জেলার দুইটি উপজেলা ২২টির বেশি ক্লাব ঘুরে দেখা গেছে সরকারের বরাদ্দ নাস্তার দুই ভাগের মাত্র একভাগ পায় ক্লাব সদস্যরা। কোন কোন এলাকায় ক্লাব সপ্তাহে ১দিন চালু অপর দিন বন্ধ। কিশোর কিশোরীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, বাল্য বিয়ে রোধ, গান-আবৃত্তি ও ক্যারাটে শেখানোর জন্য ২০১৮ সালে মহিলা অধিদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই প্রকল্প অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় চার হাজার আটশ’ তিরাশিটি ক্লাব স্থাপন করা হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিটি ইউনিয়ন আর পৌরসভার একটি স্কুলে সপ্তাহে শুক্র-শনি ৩০ জন কিশোর কিশোরীকে এই ক্লাবে সাংস্কৃতিক নানা বিষয় শেখানোর কথা।
    প্রতিটি ক্লাবের জন্য একটি হারমোনিয়াম, তবলা, ক্যারাম, লুডু দাবা সহ পাঁচ হাজার টাকার বই ও সাময়িকী দেয়া হয়। গান-আবৃত্তি শেখানোর জন্য আছে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক। প্রতি পাঁচ ক্লাবের জন্য একজন জেন্ডার প্রোমোটর। জেলার দায়িত্বে একজন ফিল্ড সুপারভাইজার। ক্লাব বেশি হলে সুপারভাইজার সংখ্যা জেলায় দুই জনও দেয়া হয়েছে।
    ক্লাব দেখভালের জন্য জেলায় সুপারভাইজারদের দেয়া হয়েছে মোটরসাইকেল। যার জ্বালানি খরচও দেয়া হয় এই প্রকল্প থেকে।
    প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখতে দেবীগঞ্জ , বোদা ও আটোয়ারি উপজেলা ভ্রমণে যায় প্রতিবেদক। সব জায়গাতেই গিয়ে দেখতে পাওয়া গেছে প্রকল্পের কাগজে ও বাস্তবেও ব্যাপক গড়মিল। শুক্র-শনি বেলা ৩-৫টা পর্যন্ত ক্লাব চালু থাকার কথা। দেবীগঞ্জ , উপজেলার লক্ষির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা তিনটায় দেখা যায় ক্লাবের রুমে মেঝেতে রাখা আছে স্কুল বিভিন্ন সামগ্রী। বেলা চারটায় পাশের ৮নং দন্ডপাল ইউনিয়নের কালিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শনিবার ক্লাব বন্ধ পাওয়া যায়। অথচ কথা অনুযায়ী ক্লাব চালু থাকার কথা ছিলো শনিবারেও । শুধু সদর উপজেলা নয় দেবীগঞ্জ ,বোদা ও আটোয়ারি তিন উপজেলার ২২টি ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় বেশির ভাগই নিয়ম মানছে না। আর যেগুলো খোলা আছে তাতে কাগজে কলমে ৩০ জনের নাম থাকলে বাস্তবে উপস্থিত খুবই কম। আর তাদের জন প্রতি ৩০ টাকার যে নাস্তা দেবার কথা সেটাও ১৫-১৮ টাকার বেশি না। দেবীগঞ্জ ,বোদা উপজেলার একই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাই দুই উপজেলার বেপারে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি পঞ্চগড়ে তার অফিসে দেখা করতে বলেন। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনিও অসূস্থার কথা বলে । বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানান।
    ক্লাব ঠিক ভাবে পরিচালিত হয় কি-না তা দেখভালের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে বছরে দুটি সভার জন্য দেশ জুড়ে বছরে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বোদা উপজেলার নির্বাহী অফিসার বহ্নি শিখা আশা এমন সভার কথা জানেই না। দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: গো্লাম ফেরদৌস জানান, তিনি কখনই সভায় যোগ দেয়ার কোন চিঠি পাননি। আটোয়ারি উপজেলার নির্বাহী অফিসার মুশফিকুল হালিম বলেন আমি এবেপারে বেশি কিছু জানি না ।
    দেবীগঞ্জ , বোদা, আটোয়ারি উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গন সদস্য তালিকায় নাম থাকলেও কোন সভায় তাদের কে জানানো হয়না বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান গন।
    সিএমসি সভায় তাদেরও উপস্থিত থাকার কথা। অথচ তারা কেউ ক্লাব সম্পর্কেই জানেন না। কেন জানেন না, এমন ধরনের প্রশ্নের জবাবে জানান, জানানো হয় না, তাই জানেন না।
    প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জনকে ৩০ টাকা করে নাশতার জন্য পাঠানো হয়। তিন উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে এক দিনের একটি ক্লাবের নাস্তার খরচ ৯০০ টাকা অর্থাৎ ২২ টি ক্লাবের একদিনের নাস্তার খরচ হয় ১৯৮০০ টাকার বেশি।
    মাসে আট দিনের নাস্তার জন্য দেয়া হয় ১ লাক্ষ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকা =(২২ টি ক্লাবের হিসাব )।জেলার ফিল্ড সুপারভাইজারের দাবি নাস্তার জন্য দেয়া ২৫ টাকা। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন নাস্তা দেয়া হয় ২০ টাকার। সরকারের হিসাবে আছে ৩০ টাকার নাস্তার হিসাব ।
    ক্লাব বন্ধ ও সদস্যরা না আসলে নাস্তার টাকা তাহলে কোথায় যাচ্ছে? এর উত্তর জানতে প্রতিবেদক পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ ,বোদা,আটোয়ারি উপজেলা ২২টি ক্লাবে যায়।
    তিন উপজেলায় ২৬ টি ক্লাবের মধ্যে ২২টি ক্লাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণকৃত ক্লাব গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গিয়েছে। কোন ক্লাবে দেখা যায় সাইনবোর্ড বিহীন। এমন ক্লাব আছে যাতে সদস্য উপস্থিতি অনেক অংশে কম। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম পরিচয় গোপন রাখা সত্বে একজন শিক্ষিকা বলেন সদস্য কম আসলে যে টাকা বাঁচে তা দিয়ে যন্ত্রপাতি মেরামত করা হয়। যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে অফিস থেকে ঠিক করে দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন।

    কিশোর কিশোরী ক্লাবগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখা যায়নি ।এবং বয়লার মুরগির কাচা ডিম সদস্যদের হাতে দেওয়া হয়। এমনও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, যা সদস্যরা কাঁচা ডিম বাজারে বিক্রি করে দেয়। একজন সদস্য জানান কাঁচা ডিম নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক সময় হাত থেকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।

    আরও খবর

    Sponsered content