• Archive Calendar

  • <img class=”alignnone size-full wp-image-10168″ src=”https://bdnewstoday24.com/wp-content/uploads/2023/05/IMG-20230504-WA0053.jpg” alt=”” width=100% height=”auto/>

  • তথ্যকণিকা

    জোর করে অন্যের দোকান দখল,দেন না রাজস্ব

      প্রতিনিধি ১৮ আগস্ট ২০২৩ , ২:০৫:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    মারুফ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার:

    রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেট। মার্কেটের দ্বিতীয় ও নিচতলায় খন্দকার মনির উদ্দিন আহম্মদ নামের এক ব্যবসায়ীর চারটি দোকান প্রায় ৩০ বছর ধরে দখল করে আছেন শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ হোসেন।

    এতো দিন ধরে দোকানগুলোর রাজস্বও পাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ৩৫ নং দোকানের ১৯৯৭-৯৮ সালের প্রথম কিস্তি থেকে ২০২২-২৩ সালের চতুর্থ কিস্তি পর্যন্ত ৮৯ হাজার ২৫০ টাকা, ৪২ নং দোকানের ১৯৯৯-২০০০ সালের প্রথম কিস্তি থেকে ২০২২-২৩ সালের চতুর্থ কিস্তি পর্যন্ত ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা, ১৯৯৮-৯৯ সালের দ্বিতীয় কিস্তি থেকে এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং নিচ তলার ৬০ নং দোকানের ১৯৯৪-৯৫ সালের প্রথম কিস্তি থেকে ২০২২-২৩ সালের চতুর্থ কিস্তি পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৬০০ টাকা বকেয়া বাকি রয়েছে। এই দোকানগুলো মনির উদ্দিনের নামে থাকলেও দোকানগুলো তার দখলে নেই। বরং মোশাররফ হোসেন দোকানগুলো জোর করে দখল করে আছেন। দোকান মনির উদ্দিনের দখলে না থাকায় সেই রাজস্ব করা সম্ভব হচ্ছে না।

    আজিজ কোঅপারেটিভ সোসাইটির গাড়ি পার্কিংয়ের র্যা ম্প দখল করে খাবার হোটেল :
    রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের পাশেই তৈরী করা হয়েছে আজিজ কোঅপারেটিভ সোসাইটি। ১৬০টি ফ্ল্যাটের ভবনটিতে বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং রয়েছে চার তলা পর্যন্ত। কিন্তু তারা এ পার্কি ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা কিন্তু পার্কিংয়ের র্যা ম্প (গাড়ি ওঠানামার ঢালু পথ) দখল করে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ হোসেন রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন।
    বর্তমানে শাহবাগ আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকলেও ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি এ রাস্তা ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ আজিজ কো অপারেটিভ ফ্লাট মালিক সমিতির। সোসাইটির বাসিন্দারা আশপাশের রাস্তাতেই গাড়ি রাখেন। এতে করে পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিজি হাসপাতাল) মাঝের সড়কসহ চারপাশের রাস্তা ব্যবহার করতে ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা।
    এদিকে দখল হওয়া র্যা ম্প উদ্ধারে আজিজ কোঅপারেটিভ সোসাইটির বাসিন্দারা স্থানীয় কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমনকি অভিযোগ দেওয়ার কারণেও দখলদারদের হুমকি-ধমকি হজম করতে হচ্ছে তাদের।
    স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে লিখিত অভিযোগে সোসাইটির বাসিন্দারা বলছেন, আজিজ কো অপারেটিভ সোসাইটিতে অনেকগুলো পরিবার বসবাস করে, যাদের অনেকের ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ী রয়েছে এবং এখানে বসবাসরতদের গাড়ী রাখার জন্য চারতলা পর্যন্ত পার্কিং এর ব্যবস্থা নকশা অনুযায়ী থাকলেও গাড়ী ওঠানোর যেই র্যা ম্প রয়েছে তা ২০০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সৈয়দ মোশাররফ হোসেন অবৈধভাবে দখল করে একটি হোটেল স্থাপন করেছেন।
    এই হোটেলে অবৈধ বিদ্যুৎ ও নিষিদ্ধ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে হোটেলটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, এই হোটেলটির পাশে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (বিসিএস প্রশাসন একাডেমি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) রয়েছে । নিষিদ্ধ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের ফলে এখানে যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার মাধ্যমে অনেকে হতাহত হতে পারে এবং র্যাম্পটি অবৈধভাবে দখল করে রাখার ফলে আজিজ কো অপারেটিভ সোসাইটিতে বসবাসকারীরা তাদের ব্যাক্তিগত গাড়ী বৈধ পার্কিং ব্যবহার করতে না পেরে যত্রতত্র রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
    আজিজ কোঅপারেটিভ সোসাইটির বাসিন্দা এবং সাবেক সচিব এ. কে. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক জায়গাতে অভিযোগ দিয়েও কোনও প্রতিকার পাইনি। র্যা ম্প দখল করে নির্মাণ করা হোটেলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিষিদ্ধ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। হোটেলটির পাশে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি ও পিজি হাসপাতাল রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করার কারণে যেকোনও সময় এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
    র্যা ম্প দখল করে রেস্টুরেন্ট বানানোর কারণ জানতে চাইলে সৈয়দ মোশাররফ হোসেন বলেন, এখানে এলাকার যুবকেরা আড্ডাবাজি করার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। এ কারণেই এখানে রেস্টুরেন্ট বানানো হয়েছে। এছাড়া র্যা ম্পটি আমাদের ওষুধ মার্কেটের সাথে হওয়ায় আমরা মার্কেটের আয় বাড়াতে এটি ভাড়া দিয়েছি।
    র্যা ম্পটি দখল করা প্রসঙ্গে স্থানীয় ২১ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সোসাইটির বাসিন্দারা অভিযোগ দেওয়ার পর আমি মোশাররফ সাহেবকে র্যা ম্পটির দখল ছেড়ে দিতে বলেছি। কিন্তু তিনি না ছাড়লে তো আমার কিছু করার নাই।

    ভাড়া না দিয়ে দখলে রেখেছেন ফ্ল্যাট :
    রাজধানীর শাহবাগের নবাব হাবিবুল্লাহ রোডে ‘‘আকবর নকশী প্যালেস’’ নামক বিল্ডিং তৈরী করেছে এম্পায়ার গ্রুপ। এই বিল্ডিংয়ের ৮/এ নাম্বার ফ্ল্যাটে থাকেন মো. মোশারফ হোসেন। সেখানে ২০১৭ সাল থেকে বসবাস করছেন তিনি।
    তবে গত এক বছর ধরে তিনি ভাড়া না দিয়ে গ্রুপের লোকজনদের সঙ্গে অসদাচরণ করছেন বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এ কারণে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর এবং ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বকেয়া পরিশোধ করতে দুইটি লিখিত নোটিশ পাঠানো হয় তাকে। এছাড়া ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর তাকে কোম্পানির আইনজীবির মাধ্যমে একটি লিগ্যাল নোটিশও প্রদান করা হয়। একারণে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মোশাররফ হোসেন ভবনের হিসাবরক্ষণ অফিসার শাহ মো. সোহেল ও কেয়ারটেকার মো. ফেরদৌসকে বাসা ছেড়ে দেবেন না বলে মর্মে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করেন মোশাররফ। এর দুইদিন পর তার নামে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয় (জিডি নং- ১৭৮৯)।
    পরবর্তীতে এ বিষয়ে আকবর নকশী প্যালেস ফ্ল্যাট মালিক সমিতিতে কোম্পানিটি লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ মে স্থানীয় ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। অভিযোগ পেয়ে কাউন্সিলর আসাদ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে জুন মাসের ৫ তারিখে সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত হতে নোটিশ পাঠালেও সাড়া দেননি মোশাররফ হোসেন।
    এছাড়া এই মোশাররফ হোসেন ১৯৯৩ সালে রাজধানীর বাংলামটরের বাসিন্দা মৃত হারুন অর রশিদ নামে এক ডিস লাইন ব্যবসায়ীর বিল সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ করতেন। হারুন অর রশিদ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন ৫৭ নং ওয়ার্ডে (বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ড) ডিস লাইনের ব্যবসা করতেন। ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি তিনি হারুন অর রশিদের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করেন। পরে সেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হারুন অর রশিদ যে এলাকায় ডিস ব্যবসা করতেন তার অর্ধেক এলাকা দিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। বাধ্য হয়ে হারুন তাকে ব্যবসার অর্ধেক দিয়ে দেন। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামা এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যদিও তাতে মামলার বিষয়টি উল্লেখ নেই। তবে চুক্তি চলাকালে উপস্থিত দুইজন স্বাক্ষীও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া মোশাররফ হোসেন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে, সেই দলের রাজনীতিতে যুক্ত হন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

    বিক্রির পরও ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেননি গাড়ি :
    মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে গাড়ি বিক্রি করে সেটি ক্রেতাকে বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ৫ জুন মোশাররফ হোসেনের গাড়ি টয়োটা হেবিয়ার জিপ কার (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৩৯৯৭) ৫৬ লাখ টাকা দিয়ে কেনে এস ইসলাম কারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি গাড়ির টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করলেও মোশাররফ গাড়ির ব্যাংক ক্লিয়ারেন্সের কাগজ দেননি। একারণে ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে প্রতিষ্ঠানটি।
    এ বিষয়ে ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গাড়ি কেনার পর ওই গাড়ির ওপরে যে ব্যাংক লোন ছিলো সেটি পরিশোধ করি। কিন্তু মোশারফ হোসেন সেই টাকা নগদ তুলে ফেলে। পরে আবার টাকা দিয়ে গাড়ির ব্যাংক ক্লিয়ারেন্সের কাগজ তুলি। সেখান থেকে এখনো আট লাখ টাকা আমি পাওনা আছি।
    সার্বিক বিষয়ে ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠালেও তিনি কখনও আসতেন না।

    আরও খবর

    Sponsered content