প্রতিনিধি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১১:৫৬:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুদখোর সিন্ডিকেটের কবলে অসহায় সাধারণ মানুষ। সুদখোরদের অত্যাচারে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, উপজেলার সুদের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। সেই সাথে হারাচ্ছেন ভিটে বাড়ি ও সুখের সংসার। দ্রুত সুদের টাকা বৃদ্ধি হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০০ টাকায় সপ্তহে ২০ টাকার অস্বাভাবিক সুদ দিতে হয়। আরোও জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ভয়ংকরভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সুদখোর মহাজনেরা। এই অবৈধ সুদ ব্যবসার কারণে মানুষ হচ্ছে সর্বশান্ত এবং অসহায় মানুষসহ সমাজ হচ্ছে ধ্বংস। ওই সব অবৈধ সুদখোরদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ বা অবৈধ সুদ ব্যবসা বন্ধ করার মতো প্রশাসন কর্তৃক না নেওয়ায় দেধারছে-নির্ভয়ে-প্রকাশ্য ভয়ংকরভাবে সুদখোরেরা মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করে চলছে যার প্রতিকার পাওয়ার উপায় ভুক্তভোগীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নওয়াপাড়া মাছ ব্যবসায়ী শফিক জানান, সুদখোর দুলালের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি, তিন লাখ টাকা পরিশোধ করার পরেও তার টাকা পরিশোধ হয়নি, আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সুদখোরদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো সখিনা বেগম জানান, সুদাসল দুই’ই প্রদান করা হয়, তারপরও সুদের টাকা পরিশোধ হয় না, পাওনা থাকে বছরের পর বছর। তিনি আরোও জানান, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়া সুদের খেসারত দিতে গিয়ে আমাকে হারাতে হয়েছে বসত ভিটা, গোয়ালের গরু আর সুখের সংসার । শেষ সম্বল বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। আর এভাবেই দিনের পর দিন কাবলিওয়ালাদের মতো সুদখোরদের অত্যাচার চলছে অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই সব সুদখোরদের রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও সন্ত্রাসী লোকদের সাথে সম্পর্ক। ফলে, ভুক্তভোগীদের চড়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে দেরি হলে পরিবারটির উপর চলে বিভিন্ন জুলুম নির্যাতন যা নীলকরদেরও হার মানায়। আরোও জানা গেছে ওই সব সুদখোর মহাজনেরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্যাংকের ব্লাকং চেকে সই করিয়ে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো চেকে টাকার অংক বসিয়ে চেক ডিজনার মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার গুলোকে নিঃস্ব করে ফেলছে। চেক ডিজনার মামলা এখন উপজেলার সকল সুদখোরদের একটি পরিবারকে ধ্বংস করার মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ফলে অবৈধ সুদ ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বর্তমান সকল গ্রাম থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ সুদখোরদের রমরমা কারবার। সুদখোরদের অত্যাচারে উপজেলার অনেক মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনৈতিক পন্থায় ব্লাংক চেক সুদখোরদের হাতে রেখে আদালতে চেক ডিজনার মামলা করে পরিবারগুলোকে করে ফেলছে সর্বশান্ত ও নিঃস্ব যা বন্ধ করা জরুরি। উপজেলার দেওয়াপড়া গ্রামের শরিফা বেগম জানান, সুদখোর রফিকুলের কাছ থেকে বিপদে পড়ে ব্যাংকের ব্লাংক চেক দিয়ে ৭১ হাজার টাকা নিয়ে ১লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও আমার চেক ফেরত না দিয়ে ৪ লাখ ৩০হাজার টাকার চেক ডিজনার মামলা করে হয়রানি করছে এবং আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। একই অভিযোগ ওই এলাকার মারুফ, ফতেমাসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবারের। উপজেলায় অবৈধ সুদখোরদের লাগামহীন ভাবে অসহায় মানুষদের অত্যাচার নির্যাতনকারীদের লাগাম টেনে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
এবিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আবু নওশাদ বলেন, সুদখোরদের সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য কেও যদি আইনী সহায়তা চান তবে তাকে দেওয়া হবে।