প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৫৩:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
মুহাম্মদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে বান্দরবানের মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের অনেকের পুকুরের মাছই ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবারের বন্যায় বান্দরবানে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে পুকুর ও জলাশয় ডুবে ভেসে গেছে মাছ।
টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে অনেক ছোট-বড় বাঁধ। বান্দরবান শহরের বাজার এলাকা, মেম্বার পাড়া, ধোপা পুকুর, রোয়াংছড়ির তারাছার ছাইঙ্গা, রেইচা, গোয়ালিয়া খোলা, সুয়ালক, মাঝের পাড়া, মুসলিম পাড়া, চড়ুই পাড়া এবং রুমা, থানচি, লামা আলীকদম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বেশিরভাগ পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ছোট বড় বাঁধ ভেঙে অনেক চাষির স্বপ্ন ভেঙে গেছে। হঠাৎ করে বন্যায় সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব অনেক মৎস্য চাষি।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৎস্য চাষি মো. নোমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ৬ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বান্দরবানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, আর এ বৃষ্টিতে আমার সাতটি জলাশয়ের মধ্যে তিনটি ডুবে যায়। আর এসব জলাশয়ের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এখানে আমার অনেকগুলো টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। ছাইঙ্গা দানেশ পাড়ার মৎস্য চাষি মো. আলম, মৎস্য চাষী মো: মোরশেদ মেম্বার বলেন, আমাদের পাঁচ একর করে দুটি মাছের লেক ছিল, লেক গুলোর পাড় এবারের বন্যায় ভেঙে সব মাছ ভেসে গেছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ বহু জাতের মাছ বড় হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সব শেষ, আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ চাষিই বেশি সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। এখন মাছ ভেসে যাওয়ায় একদিকে সংসার চালানোর চিন্তা, অন্যদিকে চিন্তা ঋণ শোধের। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ছাইঙ্গা এলাকার মৎস্য চাষি ওমর ফারুক বলেন, ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনটি লেকে মাছ চাষ করেছি, কিন্তু অতিবৃষ্টিতে মাছের পোনাসহ সব শেষ হয়ে গেছে। লেকের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে আর আমার ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। সুয়ালক ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মৎস্য চাষী মো: ছৈয়দ ফকির বলেন, ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুটি লেকে মাছ চাষ করেছি, কিন্তু অতিবৃষ্টিতে শত্রু কর্তৃক লেকের পাড় কেটে দেওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ এবং মাছের পোনাসহ সব শেষ হয়ে গেছে। লেকের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে আর আমার ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। একই এলাকার মৎস্য চাষী আশীষ দে বলেন, আমিও ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৪টি প্রজেক্টে মাছ চাষ করেছি, অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ এবং মাছের পোনাসহ আমার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য চাষি ওমর ফারুক, মোরশেদ মেম্বার, মো: ছৈয়দ ও আশীষ বাবু বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে মৎস্য ঋণ মওকুফ ও সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে আগামীদিনে নতুনভাবে মৎস্য চাষে আগ্রহী হবেন অনেকেই।
বান্দরবান জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, বান্দরবানের সাত উপজেলায় ২৩৯৮টি পুকুর রয়েছে এবং লেক রয়েছে ৫৭৫টি। জেলায় এবারের বন্যায় ৪২৯টি পুকুর এবং ১৫৯টি লেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫০ টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিৎ শীল ও বান্দরবান সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: মামুনুর রহমান জানান, এবারের বন্যায় বান্দরবানের বেশিরভাগ মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আর বৃষ্টির কমার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য যাচাই করছি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানে প্রায় প্রায় পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।